রমজানে ইতেকাফ এর নিয়ম

রমজান মাসের শেষ দশ দিন দুনিয়াবী সব কাজকর্ম বাদে আখিরাতমুখী হওয়ার জন্য ইতেকাফ করা হয়।ইতেকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আল কিফায়া।অর্থাৎ কোন এলাকার সবার পক্ষ থেকে যে কাউকে আদায় করতে হবে অন্যথায় এলাকাবাসী সবাই গুনাগার হবে।

ইতেকাফের-ফযিলত

নবী করিম(সা) নিজেও ইতেকাফ করতেন।গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম।মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজার শেষ দশ দিন এতেকাফ করবে ওই ব্যক্তি দুটি হজ ও দুটি ওমরাহ সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানে ইতেকাফ এর নিয়ম

রমজানে ইতেকাফ 

ইতেকাফ শব্দের অর্থ স্থির থাকা,অবস্থান করা,কোন জিনিসকে আঁকড়ে ধরা।ইতেকাফ একটি ইসলামিক চর্চা যেটি রমজানের শেষ দশদিন মসজিদে অবস্থান করার সময় নিয়ে গঠিত।আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভের জন্য দুনিয়াবী সকল কাজকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রেখে মসজিদে অথবা বাড়িতে পবিত্র স্থানে ইবাদত করাকে ইতিকাফ বলে।যে ব্যক্তি ইতেকাফের জন্য মসজিদে অবস্থান করে তাকে বলা হয় আকিফ।

এবং যে ইবাদতে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় মুতাকিফ।ইতেকাফের হুকুম আল কুরআনে ও আছে।সূরা আল বাকারার ১২৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন, এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে হুকুম করি,তোমরা আমার ঘরকে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র কর যারা তাওয়াফ করবে ইতেকাফ করবে এবং রুকু সিজদা আদায় করবে।

ইতেকাফের প্রকারভেদ

ইতিকাফ কে ওয়াজিব মুস্তাহাব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিশেষ কোনো মান্নতের ইচ্ছা পোষণ করে যে ইতেকাফ করা হয় সেটি ওয়াজিব।রমজান মাস বাদে বাকি এগারোটি মাস যে ইতেকাফ করা হয় সেটি মুস্তাহাব। রমজান মাসে যে ইতেকাফ করা হয় সেটি সুন্নত মক্কাদাহ।

আরো পড়ুনঃ ইস্তেখারার নামাজ


কারো মতে ফরজে কিফায়া।রমজান মাসের ইতেকাফ টি না করা হলে,যে এলাকায় করা হবে না সেই এলাকার এলাকাবাসী দায়ী থাকবে।আর যদি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কেউ একজন ইতেকাফ করে তাহলে সবার হক আদায় হয়ে যাবে। 

ইতেকাফের শর্তাবলী 

  • ইতেকাফের প্রথম শর্ত হলো ইতেকাফ কারী কে মুসলমান হতে হবে।
  • ইতিকাফ কারী কে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও বোধশক্তি সম্পন্ন হতে হবে।
  • ইতিকাফ কারী কে ভালো খারাপের পার্থক্য করার মত জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
  • ইতেকাফ কারীকে ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে।
  • ইতিকাফ কারী কে বড় নাপাক থেকে বিরত থাকতে হবে।অর্থাৎ নারীদের হায়েজ নিফাস থেকে পবিত্র থাকতে হবে। ইতেকাফ অবস্থায় যৌন মিলন করলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। স্বপ্নদোষের কারনে ইতেকাফ ভাঙবে না কিন্তু হস্তমৈথুন করলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।
  • ছেলেদের ক্ষেত্রে ইতেকাফ মসজিদে করতে হবে।আর মেয়েদের ক্ষেত্রে বাড়িতে পবিত্র স্থানে।

মেয়েদের ইতেকাফের নিয়ম

মেয়েদের ইতেকাফের নিয়ম খুব একটা জটিল নয়।ছেলেরা মসজিদে ইতেকাফ করলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে মসজিদের ব্যবস্থা না থাকায় বাসায় তারা ইতেকাফ করতে পারে। ইতেকাফের জন্য মেয়েরা প্রথমে নিয়ত করবে। এজন্য একটি নির্জন ও পবিত্র কক্ষে অবস্থান করতে হবে যার উদ্দেশ্য হবে ইবাদত বন্দেগী করা।

আরো পড়ুনঃ ২০২৫ সালে লাইলাতুল ক্বদর কবে


ইতেকাফের আগে অবশ্যই তার স্বামীর সম্মতি নিতে হবে।স্বামী অনুমতি দিলে তখনই কেবল ইতেকাফ করতে পারবে। ইতেকাফের জন্য অবশ্যই হায়েজমুক্ত থাকতে হবে। ইতেকাফ থাকা অবস্থায় যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে ইতেকাফ ছেড়ে দিতে হবে। ঋতুস্রাব শেষ হলে আবার ইতেকাফ করতে পারবেন।

ইতেকাফ ভেঙে যাওয়ার কারণসমূহ 

প্রসাব পায়খানা সহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন যেমন গোসল করা এরূপ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।ইতেকাফ থাকা অবস্থায় জানাযা পড়া বা রোগী দেখার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

ইতেকাফের-ফযিলত

ইতিকাফকারী যদি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার আগেই মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। কেউ যদি ইতিকাফ থাকা অবস্থায় রোজা ভাঙ্গে তাহলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।খুব বেশি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেও ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

ইতেকাফের ফজিলত 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইতেকাফ করবে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের আগুন এর মধ্যে তিনটি পরীখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন।প্রত্যেক পরীক্ষার প্রশস্ততা দুই দিগন্ত তথা আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি"। ইতেকাফ কারীর জন্য ফেরেশতারগণ ও দোয়া করেন। এ সম্পর্কে নবী(সা) বলেন,

ইতেকাফের-ফযিলত

নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকে যতক্ষণ সে কথা না বলে নামাজের স্থানে অবস্থান করে।তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন,যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে তার পরিবারের কাছে থেকে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।থেকে ইতেকাফের ফজিলত বোঝা যায়।

রমজানে ইতিকাফের সময়

রমজানে ইতিকাফ শুরু হয় ২০ রমজান সূর্যাস্তের সময় থেকে।আরবি দিন গণনা শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে।তাই একুশ রমজান থেকে ইতেকাফ শুরু হলে নিয়তকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই মসজিদে ঢুকে যেতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ লাইলাতুল ক্বদরের ইবাদত


এবং ইতেকাফ শেষ হবে শেষ রমজানে। অর্থাৎ কোন রমজানে যদি রোজা ২৯ টি হয় তবে ২৯ টি রোজার শেষ হবার পর ইতেকাফ শেষ হবে।আর যদি ৩০ টি হয় তবে ৩০ রোজার পর শেষ হবে।এটি নির্ভর করবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার উপর।

ইতেকাফ ভাংলেও গুনাহ হয় না এমন কারণসমূহ

বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে যেই সমস্ত কারণে ইতেকাফ ভাঙলেও গুনাহ হবে না।কারণ সমূহ হলো

  • ইতেকাফ কারী ব্যক্তিকে যদি অন্যায় ভাবে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
  • ইতেকাফকারী যে মসজিদে অবস্থান করছে সেই মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য মুসল্লী না থাকলে যদি ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হয়।
  • কোন ব্যক্তি অন্যায় ভাবে ইতেকাফ কারীকে মসজিদের বাইরে আটকে রাখলে।

এই সমস্ত কারণে ইতেকাফকারীর ইতেকাফ ভঙ্গ করলেও গুনাগার হবে না।

রমজান ছাড়া ইতেকাফ করা যায় কিনা 

রমজান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসেও ইতিকাফ করা যায়।রমজান বাদে অন্যান্য মাসে ইতিকাফ করা সুন্নাত।ওমর (রা), নবী (সা) কে বলেছেন, জাহিলি যুগে তিনি মান্নত করেছিলাম যে মসজিদে হারামে একরাত্রি ইতেকাফ করব।

নবী (সা) বলেন, সুতরাং তোমার মান্নত পূর্ণ করো।যার ফলে ওমর একরাত ইতেকাফ করলেন।এ হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রমজান মাস ছাড়াও ইতেকাফ করা বৈধ।এবং এটি সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রমাণিত।

মন্তব্যঃ রমজানে ইতেকাফ এর নিয়ম

ইতেকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।বিশেষত লাইলাতুল ক্বদর খোঁজার জন্য ইতেকাফ সাহায্য করে।রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত করতে হয়। আরসেই ইবাদতের পথ সহজ করে দেয় ইতেকাফ। ইতেকাফের মাধ্যমে একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে তার সিয়াম সাধনা করতে পারে।

নিজেকে পরিশুদ্ধ করার অন্যতম উপায় হল ইতেকাফ। ইতেকাফ আদায়ের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পান এবং ঐ এলাকার সমস্ত মানুষকে দায়মুক্ত করেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url