বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালত ব্যবস্থার গঠন ও কার্যক্রম

বাংলাদেশে দেওয়ানী আদালত পাঁচ ধরনের। দেওয়ানী আদালত আইন,১৮৮৭ এর ভিত্তিতে দেওয়ানী আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-আদালত-ব্যবস্থার-গঠন-ও-কার্যক্রম
দেওয়ানি আদালতে অর্থ ও চুক্তি  সম্পর্কিত বিষয়বলী সাধারণভাবে বিচার করা হয়। জানি আদালতের স্তরবিন্যাস ও ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালত ব্যবস্থার গঠন ও কার্যক্রম

বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালত ব্যবস্থার গঠন

দেওয়ানি আদালত আইন,১৮৮৭ এর ৩ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আদালত ৫ ধরনের হবে-
  • জেলা জজের আদালত।
  • অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত।
  • যুগ্ন জেলা জজের আদালত।
  • সিনিয়র সহকারি জজ।
  • সহকারী জজ।
উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটা আদালতে আলাদা আদালত এবং প্রত্যেকের আলাদা অধিক্ষেত্র রয়েছে। বিভিন্ন আইনের আরোপ সাপেক্ষে উক্ত অধিক্ষেত্র সমূহ আদি আপিল বা হস্তান্তরিত ও অধিক্ষেত্র ইত্যাদি হতে পারে। দেওয়ানী আদালত আইনের ১৯ ধারা মোতাবেক সহকারী জজের আর্থিক অধিক ক্ষেত্র ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক অধিক ক্ষেত্র ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কোন দেওয়ানী মামলার দাবির পরিমাণ যদি অনধিক ১৫ লক্ষ টাকা হয় তাহলে সরকারি জজের আদালতে উক্ত মামলাটি দায়ের করতে হবে।
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-আদালত-ব্যবস্থার-গঠন-ও-কার্যক্রম
আবার যদি ১৫ লক্ষ টাকার বেশি কিন্তু ২৫ লক্ষ টাকার কম হয় তাহলে উক্ত মামলাটি দায়ের করতে হবে সিনিয়র সহকারী জজের আদালতে। কোন দেওয়ানি মামলার দাবির পরিমাণ যদি ২৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় তাহলে উক্ত মামলাটি যুগ্ম জেলা জজের আদালতে দাখিল করতে হবে। ২৫ লক্ষ টাকার উপরে দাবির পরিমাণ যতই হোক সেটি যুগ্ম জেলা জজের আদালতে দায়ের করতে হবে। দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর ১৮ ধারা এবং দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারার যৌথ ফল এটি। দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেকটি মামলা অবশ্যই বিচার করার উপযুক্ত সর্বনিম্ন স্তরের আদালতে দাখিল করতে হবে।

এক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর ১৮ ধারা পাঠ করলে পাওয়া যায় দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫ ধারা সাপেক্ষে জেলা জঅজ অথবা যুগ্ম জেলা জজের এখতিয়ার মূল মামলা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যুগ্ম জেলা জজ এর আর্থিক এখতিয়ার সীমাহীন। জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজে আদি এখতিয়ারে কোন মামলা দায়ের হয় না। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ সাধারণত কোন মূল মামলা বিচার করেন না। তবে বিভিন্ন বিশেষ আইনে তাদের আদি এখতিয়ার আছে। যেমন ১৯৪০ সালের ট্রেডমার্ক আইনের ৭৩ ধারায় উক্ত আইনের অধীনে মামলার বিচার করার আদি এখতিয়ার জেলা জজকে দেওয়া হয়েছে।

দেওয়ানী আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্র

দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর ১৩ ধারায় দেওয়ানী আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্র সম্পর্কে বিধান করা হয়েছে। ধারাটিতে বলা হয়েছে-
  • গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এই আইনের অধীনে আদালতের এখতিয়ার নির্ধারণ ও পরিবর্তন করতে পারে।
  • যদি একই স্থানীয় অধিক্ষেত্র দুই বা ততোধিক যুগ্ম জেলা অথবা দুই বা ততোধিক সিনিয়র সহকারী অথবা সহকারী জজ এর উপর বর্তায়, হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ বা বিশেষ আদেশ সাপেক্ষে জেলা জজ যেরূপ উপযুক্ত মনে করবেন সেরূপ যুগ্ম জেলা জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ কর্তৃক আমলযোগ্য দেওয়ানি কার্যাদি অর্পণ করবেন।
  • উপধারা ২ এর অধীন জেলা জজ কর্তৃক যদি দুই বা ততোধিক যুগ্ম জেলা জজের মধ্যে একজনের অথবা দুই বা ততোধিক সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ এর মধ্যে একজনের উপর অর্পিত স্থানীয় অধিক ক্ষেত্রে দেওয়ালি বিষয়াবলী উদ্ভব ঘটে আর যদি উপধারা ১ এর অধীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে থেকে সমুদয় বা আংশিকভাবে জেলা জজ কর্তৃক অর্পিত অধিক্ষেত্রের বাইরে উক্ত দেওয়ানী বিরোধের উদ্ভব হয়ে থাকে সেই কারণে সেটি অবৈধ হবে না।
  • একজন যুগ্ম জেলা জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ স্মল কজ কোর্টের একজন বিচারক নিযুক্ত হলে তিনি এই ধারার আওতায় যথাক্রমে যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী বা সহকারী জজ হবেন।
  • এই আইনের অধীনে দেওয়ানী আদালতের বর্তমান স্থানীয় অধিচিত্র এই ধারার অধীনে নির্ধারিত বলে গণ্য হবে।

দেওয়ানী আদালতের মামলা ও আপিল বদলি এখতিয়ার

যেকোনো পর্যায়ে কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বা স্বেচ্ছায় প্রণোদিত হয়ে দেওয়ানী কার্যবিধির ২৪ ধারা অনুসারে জেলা জজ-
  • তার অধীনে থাকা যে কোন মামলা, আপিল বা অন্য কোন কার্যধারার বিচার অথবা নিষ্পত্তির জন্য অধীনস্থ কোনো আদালতে বদলি করতে পারেন।
  • অধীনস্থ কোনো আদালতের মামলা বা আপিল বা অন্য কোন কার্যধারা প্রত্যাহার করতে এবং তা অন্য কোন অধীনস্থ আদালতে বিচার অথবা নিস্কত্তির জন্য বদলি করতে পারেন।
  • যে আদালত থেকে সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছিল সে আদালতে পুনঃ বদলি করতে পারবেন।
জেলা জজ কর্তৃক আপিল বদলি করা সংক্রান্তে ২২ ধারায় নিম্ন বর্ণিত বিধানগুলির কথা বলা হয়েছে-
  • সিনিয়র সহকারি জজ বা সহকারি জজ এর ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আনিত তার অধীনে চলমান কোনো আপিল জেলা জজ নিজ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীনের কোন যুগ্ম জেলা জজের নিকট বদলি করতে পারেন।
  • এভাবে বদলি কৃত কোন আপিল জেলা জজ প্রত্যাহার করে নিজে শুনতে ও নিষ্পত্তি করতে পারেন অথবা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনাধীনের উপযুক্ত কোন আদালতে নিষ্পত্তির জন্য বদলি করতে পারেন।
  • জেলা জজ যেসব কার্যাদি তাদের উপর অর্পণ করতে পারেন সে সকল কার্যাদি অতিরিক্ত জেলা জজগণ সম্পাদন করে থাকেন এবং উক্ত ক্ষেত্রে জেলা জজ যে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, অতিরিক্ত জেলা জজ গণও সেরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

দেওয়ানী আদালতের বিশেষ এখতিয়ার

দেওয়ানি আদালত আইন ১৮৮৭ এর চতুর্থ অধ্যায়ের ২২ থেকে ২৫ক ধারা সমূহ বিশেষ একটি আর সম্পর্কে আলোকপাত করেছে। এই অধ্যায় মূলত নিম্নোক্ত ধারণের বিশেষত্বের সম্পর্কে বলা হয়েছে-
  • জেলা জজের আপিল বদলি করার ক্ষমতা (ধারা ২২)
  • হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা আরোপিত এখতিয়ার (ধারা ২৩)
  • যুগ্ম জেলা জজ এবং সিনিয়র সহকারী জজ অথবা সহকারী জজকে স্মল কজ কোর্টের এখতিয়ার আরোপের ক্ষমতা (ধারা ২৫)
এছাড়াও আরো দুই প্রকারের এক্তিয়ার সম্পর্কে বলা হয়েছে। দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর ২৩ ধারায় বলা হয়েছে যে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত আদেশের উল্লেখিত যেকোনো শ্রেণীর কার্যধারা যুগ্ম জেলা জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে আমলে গ্রহণ করতে অথবা তার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন এর কোন যুগ্ম জেলা সিনিয়র সহকারী জজ
বা সহকারী জজের নিকট বদলি করতে ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। যুগ্ম জেলা জজ বা সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ কর্তৃক উক্তরূপভাবে আমলে গৃহীত কার্যধারা প্রত্যাহার করে নিয়ে নিজেই নিষ্পত্তি করতে পারেন অথবা প্রশাসনিক এখতিয়ারাধীন উপযুক্ত আদালতে নিষ্পত্তির জন্য বদলি করতে পারেন।

২৫ ধারায় বলা হয়েছে যে সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে যে রূপ উপযুক্ত মনে করে সেরূপ স্থানীয় সীমার মধ্যে কোন যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, সহকারী জজকে স্মল কজ কোর্ট ১৮৮৭ এর অধীন স্মল কজ কোর্টের এখতিয়ার প্রদান করতে পারে।

যুগ্ম জেলা জজের ক্ষেত্রে অনধিক ২৫ হাজার টাকা, ১৯ ধারার ২ উপধারায় বর্ধিত এখতিয়ার সম্পূর্ণ সিনিয়র সহকারী জজের ক্ষেত্রে অনধিক ১০ হাজার অথবা অন্যান্য সহকারী জজের ক্ষেত্রে অনধিক ৬০০০ টাকার মামলা আমল গ্রহণ ও বিচারের ক্ষমতা প্রদান এবং প্রদানকৃত ক্ষমতা প্রত্যাহার করা যায়।

দেওয়ানী আদালতের আপিল অধিক্ষেত্র

সাধারণত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে। তবে যদি জেলা জজ কর্তৃক রায় বা আদেশ প্রদত্ত হলেও আপিল যদি হাইকোর্ট বিভাগের দায়ের করা না যেত সে রূপ মামলার অতিরিক্ত জেলা জজ রায় বা আদেশ প্রদান করলে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যায় না। এ বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে দেওয়ানী আদালত আইন,১৮৮৭ এর ২০ ধারায়।

যুগ্ম জেলা জজের ডিক্রি বা অর্ডারের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করতে হবে জেলা জজের আদালতে যেখানে মূল মামলার আর্থিক অধি ক্ষেত্র ৫ কোটি টাকার বেশি হওয়া যাবে না। এর ব্যতিক্রম হলে আপিল করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে। সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজের ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে জেলা জজের আদালতে।
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-আদালত-ব্যবস্থার-গঠন-ও-কার্যক্রম
যেখানে আপিল জেলা জজের কাছে যাবে এবং এরূপ ক্ষেত্রে জেলা জজ যদি অতিরিক্ত জেলা জজকে উক্ত আপিল গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্পণ করে তাহলে উক্ত আপিল সমূহ সরাসরি অতিরিক্ত জেলা জজের কাছে দায়ের করা যাবে। দেওয়ানী কার্যবিধি আইনে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আপিলের কোন বিধান নেই। ১৯৭৮ সালের ল রিফর্ম অর্ডিন্যান্স এর মাধ্যমে দেওয়ানী কার্যবিধির ১০০, ১০১ এবং ১০৩ ধারায় দ্বিতীয় আপিলের বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। 

জেলা জজের আদালত সম্পর্কে

সাধারণত জেলা জজ আদি মোকাদ্দমার বিচার করেন না। এর কারণ হলো দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারার অধীনে প্রত্যেক মোকাদ্দমা অবশ্যই দাখিল করতে হয় সর্বনিম্ন স্তরের বিচার করার উপযুক্ত আদালতে। দেউলিয়া, প্রবেট প্রশাসন, ট্রেডমার্ক আইন ১৯৪০ ইত্যাদির মতো বিভিন্ন বিশেষ আইনে জেলা জজ হলেন কিছু কিছু মামলা বিচারের একমাত্র আদালত।

জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ার সীমাহীন অর্থাৎ যদি কোন আইনে জেলা জজকে আর্থিক অধিক্ষেত্র দেয়া হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে জেলা জজ পিকুনিয়ারি জুরিসডিকশান আনলিমিটেড হবে। হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ক্ষমতা সাপেক্ষে তার স্থানীয় অধিক্ষেত্রের আওতাধীন দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর অধীন দেওয়ানী আদালত সমূহের উপর জেলা জজের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এবং হাইকোর্ট বিভাগের অধীনস্থ যেকোনো দেওয়ানি আদালতের মামলা, আপিল অথবা অন্য কোন কার্যধারার বিচার, বদলি, প্রত্যাহার করার ক্ষমতা এই আদালতের থাকবে। এছাড়াও প্রবেট এবং প্রশাসনপত্র সংক্রান্তে এ আদালতের এখতিয়ার আছে। কোন কোন জেলায় জেলা জজ কর্তৃক বদলিকৃত মামলা বিচার ও নিষ্পত্তি করার জন্য অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত আছে। 

অতিরিক্ত ও যুগ্ম জেলা জজের আদালত

অতিরিক্ত জেলা জজের ক্ষমতা, জেলা জজের ক্ষমতার সমান। অতিরিক্ত জেলা জজ ঐ সকল মামলার বিচার করেন যেগুলো জেলা জজ তারা আদালতে হস্তান্তর করেন। অতিরিক্ত জেলা জজের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে সাধারণত হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করতে হয়। তবে ওই সকল আদেশ বা রায় যা অতিরিক্ত জেলা জজ দিতে পারতো এবং আপিল অযোগ্য সেসব ক্ষেত্রে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে না।

যুগ্ম জেলা জজ দুই ধরনের অধিক ক্ষেত্র ভোগ করে।
  • আদি
  • আপীল (হস্তান্তরিত)
আদি ওদিক ক্ষেত্রে যুগ্ম জেলা জজের আর্থিক কোন সীমা নেই। অর্থাৎ কোন দেওয়ানী মামলার দাবীকৃত টাকার পরিমান যদি ২৫ লক্ষ টাকার উর্ধ্বে হয় তাহলে উক্ত মামলা যুগ্ম জেলা জজের আদালতে দায়ের করতে হবে।

যুগ্ম জেলা জজের আদালতে যেসব মামলার দাবীকৃত টাকার পরিমাণ ৫ কোটি টাকার বেশি নয় সে সব মামলার রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজের কাছে আপিল করা যাবে। অন্যদিকে যেসব মামলার দাবিকৃত টাকার পরিমাণ ৫ কোটি টাকার বেশি সেসব ক্ষেত্রে আপিল দায়ের করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে।
সিনিয়র সহকারী জজ কিংবা সহকারী জজের আদালত থেকে যেসব আপিল জেলা জজের কাছে আসে সেগুলো জেলা জজ তার প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে যুগ্ম জেলা জজদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। দেওয়ানী আদালত আইনের ২৫ ধারা মোতাবেক যুগ্ম জেলা ক্ষুদ্র বিষয়ের আদালত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। 

সিনিয়র সহকারী জজের আদালত

যদিও দেওয়ানি আদালত আইনের তিন ধারায় সিনিয়র সহকারী জজের আদালতের কথা বলা হয়েছে কিন্তু সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ধরনের আদালত এখনো তৈরি করা হয়নি। যেসব দেওয়ানি মামলার দাবিকৃত টাকার পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকার বেশি নয় সেসব মামলা সিনিয়র সহকারী জজের আদালতে দায়ের করতে হবে।

এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজের কাছে আপিল করতে হবে। দেওয়ানী আদালত আইনের ২৫ ধারা মোতাবেক এই আদালত ক্ষুদ্র বিষয়ের আদালত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। দেওয়ানী আদালত আইনের ২৩ ধারা অনুযায়ী জেলা জজ অধঃনস্ত কোনো আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে সিনিয়র সহকারী জজ
 
বা অন্য কোন আদালতে তা প্রেরণ করতে পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী এই আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী এই আদালত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বও পালন করেন।

সহকারী জজ এর আদালত

দেওয়ানী মামলার সাধারণ স্তরবিন্যাসে সর্বনিম্ন অবস্থানকারী আদালতই হলো সহকারী জজের আদালত। যেসব মামলার দাবির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকার বেশি নয় সেসব মামলা এই আদালতে দায়ের করতে হবে। ২৫ ধারার অধীনে এই আদালতে সময়ে সময় ক্ষুদ্র বিষয়ের আদালত হিসেবে ৬০০০ টাকা মূল্যমানের মামলার দায়িত্ব পালন করে বিচার করে থাকে।

আবার গ্রাম্য আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এই আদালত আপিল ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিরোধ হলে তার বিচার ও পারিবারিক আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে।

মন্তব্যঃ বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালত ব্যবস্থার গঠন ও কার্যক্রম

দেওয়ানী মামলা সংক্রান্ত সকল প্রকারের বিচার দেওয়ানী আদালতে করা হয়ে থাকে। আর দেওয়ানি মামলা বলতে বোঝায় আর্থিক ও চুক্তি সম্পর্কিত মামলাসমূহ। বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের দেওয়ানী আদালত এর বিধান উল্লেখিত রয়েছে। পাঁচ ধরনের আদালতের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যেকের রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করার স্থান ও আলাদা। এবং প্রত্যেকে এর এখতিয়ারও আলাদা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url