আইনের শাসন বা রুল অফ ল
প্রশাসনিক আইনের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো আইনের শাসন। আয়নের শাসন পৃথিবীর সত্যদেশ সমূহের সংবিধানের মূল ভিত্তি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, অ্যামেরিকা, ভারত প্রভৃতি দেশের সংবিধানে এ বিষয়ের
প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আইনের শাসনের মূল কথা হচ্ছে আইনানুযায়ী শাসন
চলবে, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মত অনুসারে নয়। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা
যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
আইনের শাসন বা রুল অফ ল
আইনের শাসন বা রুল অফ ল সম্পর্কে স্যার এডওয়ার্ড কোক প্রথম জেমস আমলের প্রধান
বিচারপতি এর মতবাদের প্রবক্তা বলেন যে, রাজার অবস্থান সৃষ্টিকর্তা এবং আইনের অধীন
এবং তিনি প্রশাসনের উপরে আইনের প্রাধান্যের কথা বলেন। মানুষ সর্বাবস্থায় দাবি
করতে পারে যে সে আইনের শাসন মেনে চলবে অন্য কারো নয়।
মানুষ আইনের শাসন প্রয়োগ করেন তাই বলে ভেবে নেয়া ঠিক হবে না যে সেটা আইনের সীমা
অতিক্রম করতে পারে না। আবার খেয়াল খুশি আইনকে আইন বলা যাবে না আইন হতে হবে বৈধ
এবং বৈধ আইনের প্রয়োগ হতে হবে। আইনের বৈধতা নির্ণয়ের জন্য সংস্থা রয়েছে এবং
তারাও আইনের অধীন। আবার আইনের শাসন বলতে বৈধ আইনের সৎ ও সাধু প্রয়োগকে বুঝাবে।
হিংসার বশবর্তী হয়ে আইনের প্রয়োগ আইনের শাসনের বিপরীত। ডাইসির মতে ইংল্যান্ডের
আইন ব্যবস্থায় আইনের শাসন একটি মৌলিক নীতি। তার মতে আইনের শাসন হলো প্রচলিত আইনের
আধিপত্য ও কর্তৃত্ব এবং স্বৈরাচারী ক্ষমতা ও বিবেক বর্জিত স্বেচ্ছামূলক ক্ষমতার
বিপরীত। আইনের শাসনে তিনটি দিকের কথা বলা যেতে পারে সেগুলো হলো-
- আইনের প্রাধান্য।
- আইনের দৃষ্টিতে সমতা।
- আইনগত চেতনার প্রাধান্য।
আইনের শাসনে আইনের প্রাধান্য
ডাইসীর মতে স্বৈরাচারী কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা এবং বিবেক বর্জিত স্বেচ্ছামূলক
ক্ষমতার বিপরীতে প্রচলিত আইনের আধিপত্য ও কর্তৃত্বই হচ্ছে আইনের শাসন বা রুল অফ
ল। এটি স্বৈরাচারী কর্তৃত্বকে স্থান দেয় না। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আইনের যথাযথ
প্রক্রিয়ার ছাড়া আটক দণ্ডিত এবং
দৈহিক ও বৈষয়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।কোন ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনের
এবং আদালতের বিধান অমান্য না করলে তার বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা যাবে না।
অর্থাৎ আইনের প্রাধান্য কথাটির অর্থ হলো দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যক্তির
সঙ্গে ব্যবহার করা।
আইনে নেই এমন ভাবে ব্যক্তির প্রতি আচরণ করা যাবে না। কোন বিরোধপূর্ণ বিষয়ে
আইনের বিধান বা রীতিনীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। হিংসাত্মক মূলক আচরণ থেকে
বিরত থেকে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোকে আইনের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
আইনের শাসনে আইনের দৃষ্টিতে সমতা
আইনের দৃষ্টিতে সমতা হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। অর্থাৎ যে
সকল আইন সকল মানুষকে স্পর্শ করে সে সকল আইনের চোখে সকলেই সমান বিবেচিত হবে।
প্রকৃতিগতভাবে সকল মানুষ সমান নয়। কেউ শিশু, কেউ বৃদ্ধ, কেউ ধনী, কেউ গরীব,কেউ
রাজা, কেউ প্রজা। এক্ষেত্রে প্রকৃতগত এ পার্থক্যকে গুরুত্ব আরোপ না করে যাতে
সবাই সমান অধিকারে একই আইনের অধীনে ভোগ করতে পারে।
গুণগত পেশাগত পরিচয়ে মানুষ আলাদা হতে পারে মানবিক সত্যায় নয়। আর তাই যে সকল
আইন প্রতিটি মানুষের কল্যাণের জন্য যেমন বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ফৌজদারী কার্যবিধি,
সাক্ষ্য আইন সে সকল আইনের চোখে সবাই সমান। ডাইসির মতে আদালতের সীমানায় কোন
ধরনের সীমা লঙ্ঘন এবং আদালতে প্রবেশে জনগণের অব্যাহত অধিকারে কোনো প্রকার বাধা
তাদের অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তার মতে ইংল্যান্ডে আইনের শাসন বা রুল অফ ল হিসেবে সকল নাগরিকই একই আদালত এবং
একই আইনের অধীন। যেখানে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য আলাদা
ট্রাইব্যুনালের ব্যবস্থা নেই। অতএব যে সকল আইন মানুষকে স্পর্শ করে সে সকল আইন
মানুষের কল্যাণের নিবেদিত বা সকল মানুষের জন্য সমান সবাইকে সমান সুবিধা দেবে।
তাছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
আইনগত চেতনার প্রাধান্য সম্পর্কে
আইনের শাসন বা রুল অফ ল এর তৃতীয় মূলনীতি হচ্ছে আইনগত চেতনার প্রাধান্য। এর
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডাইসি বলেছেন অনেক দেশের সংবিধানেউ মৌলিক অধিকার হিসেবে
ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ব্যক্তির জীবন ও সম্পদের অধিকার সভা সমাবেশের অধিকার,
আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার ইত্যাদি সংবিধানে লিখিত আকারের সুনিশ্চিত করা
হয়েছে।
কিন্তু বৃটেনের সংবিধান অলিখিত তাই সম্ভব নয়। এগুলো বিচার আদালতের সিদ্ধান্তের
ফল যা বাস্তবে দুটি পক্ষের মধ্যে উদ্ভব ঘটনা থেকে সৃষ্টি হয়। সংবিধান
ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উৎস নয় বরং সংবিধান হচ্ছে এর পরিণতি।
আরও পড়ুনঃ ফিলিস্তিন নিয়ে কিছু কথা
এজন্যই এবং এভাবেই ডাইসি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে আদালতের আইনের ভূমিকার ওপর
গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ডাইসি পরামর্শ দিয়েছেন অধিকার যদি আদালতের আইনের মাধ্যমে
প্রয়োগযোগ্য হয় তাহলেই অধিকার সমূহ অধিকতর সুনিশ্চিত হতে পারে এবং আইনগত
চেতনার প্রাধান্য কথাটির মধ্যে দুটি বিষয় নিশ্চিত আছে।
- আইনগত চেতনা বা লিগাল স্প্রিট।
- প্রাধান্য বা প্রিডোমিনেন্স।
একটি অধিকার বা একটি দাবি পেছনে যে আইনগত সমর্থন থাকে সেটা হচ্ছে আইনগত
চেতনার মূল দিক। এছাড়া আইনানুগত, আইনভীতি, আইনের প্রতী শ্রদ্ধা ইত্যাদিদের
অন্তর্ভুক্ত। কোন একটা বিষয়ে কতটা আইন সমর্থিত আর কতটা আইন সমর্থিত নয় তা
চিন্তা করা অনুধাবন করা,
আর সে অনুসারে জীবন যাপন করার যে প্রবণতা তাকে আইনগত চেতনার অংশ বিবেচনা করা
যায়। একটি সমাজের মানুষকে আইনগত চেতনা সম্পন্ন তখনই বলা যায় যে, তারা
আইনানুগত এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ চেতনার প্রাধান্য না থাকলে আইনের শাসন
কায়েম সম্ভব নয়।
আইনের শাসন বর্তমান প্রেক্ষিত
ডাইসী আইনের শাসন বা রুল অফ ল সম্পর্কে যে মতবাদ প্রচার করেন ১৮৮৫ সালে
প্রকাশিত হবার সময় তা সার্বিকভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হয়নি। সে সময়ও
প্রশাসনিক আইন এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানকালেও
আইনের শাসন ধারণাটি বেশ সুদৃঢ় এবং জনপ্রিয় তবে তা নতুন প্রেক্ষিতে। ডাইসি তার
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ল গ্রন্থে আইনের শাসনের মধ্যে সাতটি সূলনীতির কথা উল্লেখ
করেছেন। সেগুলো হলো-
- আইন শৃঙ্খলা।
- অটল স্থির বিধি।
- অবাধ ক্ষমতা বর্জন।
- আইনের যথাযথ ব্যবস্থা এবং নিরপেক্ষতা।
- নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের চেয়ে সাধারণ আদালত ও বিচারকের অগ্রগণ্যতা বিবেচনা।
- প্রাকৃতিক ন্যায় বিচারের নীতিমালার অনুস্মৃতি।
- প্রশাসনিক কাজের উপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা।
বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের শাসন
আইনের শাসন বা রুল অফ ল বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সংবিধানের
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের
জন্য আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামাজিক
সাম্য স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।
প্রস্তাবনার এ অংশে আইনের স্বাধীনতার প্রতি জাতির অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার অংশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনুকূলে
কতিপয় অনুচ্ছেদ আছে এর মধ্যে ২৭ অনুচ্ছেদ আইনের দৃষ্টিতে সমতা বিষয়ক। এতে বলা
হয়েছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের দৃষ্টিতে সমান এ ঘোষণার
মর্মার্থ হচ্ছে কোন ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকার নয়।
আইনের দৃষ্টিতে সমতা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। ৩১ অনুচ্ছেদে আইনের
আশ্রয় লাভের অধিকার বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন
অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ছাড়া এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে
কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। এ অনুচ্ছেদে
বর্ণিত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
আইনের শাসনে ক্ষমতা পৃথকীকরণ
প্রশাসনিক আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ক্ষমতা পৃথকীকরণ বা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ।
অনেকের মতে ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া উন্নয়নের পথে একটি
প্রধান মতাদর্শগত প্রতিবন্ধক। সরকারের কার্যাবলীর তিনটি শ্রেণি রয়েছে। সেগুলো
হলো-
- আইন প্রণয়ন মূলক।
- শাসন মূলক কাজ।
- বিচার কাজ।
আইনের শাসন বা রুল অফ ল হিসেবে ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতি অনুযায়ী স্বাধীন
গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকারের এ তিন ধরনের ক্ষমতা এবং কাজ সর্বদা
চর্চা করবে। সুতরাং আইনসভা শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের কার্যাবলী পরিচালনা
করবে না। ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা
যায় যে এটি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে চর্চা হয়েছে।
আইনের শাসনে মন্টেস্কু নীতি
শাসন বা রোল অফ ল সম্পর্কে মন্টেস্কু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অনুকরণ যদি ও
লকের কাছ থেকে লাভ করেছে তবুও তার মধ্যে ও লকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য
বিদ্যমান। লক প্রধানত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে তার ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ঘোষণা করেন এবং এ কারণে তিনি সরকারের নির্বাহী এবং
বিচারবিভাগদ্বয় কে আইন বিভাগের কর্তৃত্বাধীন বলে মত দেন।
আরও পড়ুনঃ ইস্তেখারার নামাজ এর নিয়ম
তার মতে সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পন্ন স্বনির্ভর ও সমান ক্ষমতাসম্পন্ন নয়।
কিন্তু মন্টেস্কু ক্ষমতা পৃথকীকরণের যে নীতি ঘোষণা করেন তা কোন গণতান্ত্রিক
বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে করেননি। তার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যক্তি স্বাধীনতা
সুনিশ্চিত করা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রয়োজন এ যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে
খাটো করতে হয় তা করতেও তারা আপত্তি ছিল না।
এজন্য সরকারের ক্ষমতাকে তিনি আইন, বিচার ও শাসন এ তিন ভাগে ভাগ করেছেন। তার মতে
এই তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বনির্ভর ও সমান ক্ষমতা সম্পন্ন। তিনি
সরকারের একটি বিভাগকে অন্য আরেকটি বিভাগের অধীন করার পক্ষপাতি ছিলেন না।
সরকারের একটি বিভাগ অপরটির সম্পন্ন কর্তৃত্ব মুক্ত থাকবে, যা ক্ষমতা পৃথকীকরণ
নীতির মূল প্রত্যয়।
মন্টেস্কুর মতবাদের সমালোচনা
আইনের শাসন বা রুল অফ ল তে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি যদিও অত্যন্ত যুক্তি
নির্ভর তবুও এটি যখন প্রয়োগ করা হয় তখন এর মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ
তত্ত্বে যেসব ত্রুটি দেখা যায় তা হলো-
- এ তত্ত্ব সে ধারণা নিয়ে গড়ে উঠেছে যে আইন বিচার এবং শাসন বিভাগ পরস্পর থেকে আলাদা করা সম্ভব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা অসম্ভব কারণ এই তিনটি বিভাগের কাজ এবং ক্ষমতার মধ্যে পৃথকীকরণ সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে সরকারের এ তিনটি বিভাগের যে কোনটি বাকি দুই বিভাগের সীমিত কাজ সম্পাদন করে থাকে। এমতাবস্থায় এগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তৈরি এবং পরস্পর থেকে অনমনীয় দূরত্বে নির্মাণের প্রয়োগ সরকারের ব্যর্থতা অথবা মারাত্মক অযোগ্যতা প্রমাণ করে।
- ঐতিহাসিক বিশ্লেষণেও এ নীতিটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়নি। ব্রিটিশ সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসৃত হয়নি। কোন অর্থেই এ নীতি চালু হয়েছে বলা যাবে না। বলতে গেলে পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ম চালু নেই এবং বাস্তবেও সম্ভব নয়, সঙ্গতও নয়।
- এ তত্ত্ব যদি পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করা হয় তাহলে কিছু কাজ করা অত্যন্ত দুরূহ হবে। যেমন আইনসভা শুধু আইন তৈরি করবে কিন্তু এর সদস্যদের কেউ আইন সভার বিশেষ অধিকার আইন তৈরীর ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে না। অথচ বিভিন্ন আইন কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা তৈরীর দায়িত্ব শাসন বিভাগের। কারণ শাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ব্যাপারে শাসন বিভাগ বেশি গত থাকে।
- আধুনিককালে রাষ্ট্র হচ্ছে কল্যাণমূলক। রাষ্ট্র কে এখন অনেক অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। এ জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ তত্ত্ব মোটেই কার্যকরী নয়। এ নীতির কঠোর প্রয়োগ আধুনিক সরকারের কার্যক্রম স্থবির করে তুলবে।
- ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অর্থ হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতা ও কার্যসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া। তবে এটা অত্যাবশ্যকীয় এবং প্রাসঙ্গিক কাজের সীমা নির্ধারণ করা। একটি বিভাগের অত্যাবশ্যকীয় কাজে অন্য বিভাগ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না তবে প্রাসঙ্গিক কাজে বা ক্ষমতায় অন্য বিভাগ চর্চা করতে পারে। অগাধ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিতে তা সম্ভব নয়।
মন্তব্যঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
আনিস শাসন বা রুল অফ ল এর মূল ভিত্তি হল ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি। একই
ব্যক্তি সরকারের তিনটি বিভাগে একটির অধিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং
সরকারের একটি বিভাগ অন্য আরেকটি বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেনা
এবং একে অন্যের কার্যক্রম হস্তক্ষেপ করবে না। এই বিষয়গুলো ক্ষমতা
স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের
ক্ষমতা চর্চা করবে না এটিও আইনের শাসন বা রুল অফ ল।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url