ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে খুবই আগ্রহী।সরকারি বা
বেসরকারি চাকরি অনেকেই করতে চান না। তারা ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে
বেশি আগ্রহী। কিন্তু তারা ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেন না কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং
শুরু করবেন।
আর এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি শুরু করবেন সেটি
জেনে থাকা। তাছাড়া আপনি দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকবেন। এবং
ফ্রিল্যান্সিং কোনোদিন শুরু করাই হবে না। বা ভুলভাবে শুরু করলে সফল হবেন
না। চলুন জেনে নিন এ সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম সম্পর্কে সবার আগ্রহের শেষ নেই। আমরাও এই
বিষয় নিয়ে লিখতে অনেক আগ্রহী। কারণ যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার হতে
চান। এবং নিজেদেরকে ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে শুরু করতে চান
তাদের জন্য এই বিষয়টা জানা খুবই জরুরী। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার অনেক নিয়ম
আছে। প্রথমে আপনাকে জানতে হবে কোন বিষয়ের প্রতি আপনার পারদর্শিতা আছে বা
পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবেন। এটির উপর নির্ভর করছে আপনার ফ্রিল্যান্সিং
শুরু করার নিয়ম।
ফ্রিল্যান্সিং মানে কোন নির্দিষ্ট একটা কাজ নয়। ফ্রিল্যান্সিং জগত
অনেক বড়। এখানে নানা ধরনের কাজ পাওয়া যায়। যেমন ওয়েব
ডেভেলপিং, অ্যাপ ডেভেলপিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন সহ নানা ধরনের কাজ
ফ্রিল্যান্সিং এর অন্তর্ভুক্ত। আপনাকে প্রথমে বাছাই করতে হবে আপনি কোন কাজটি
করতে চাচ্ছেন। সেটার উপর নির্ভর করে আপনার ফ্রিল্যান্সিং জগতে পদার্পণ করতে হবে।
এবং শুরু করার নিয়ম আয়ত্ত করতে হবে। কাজেই প্রথমেই আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন
কোন বিষয় নিয়ে আপনি কাজ করতে চাচ্ছেন।
প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপ করুন
আগের ধাপের মতো এখানেও আমরা বলতে চাই যে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রথম এবং
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপ করা। এমন অনেক মানুষ আছেন
যারা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আয়ের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সফল হতে হলে আগে আপনাকে
একটা নির্দিষ্ট স্কিল আয়ত্ত করতে হবে। আমরা আগের ধাপেই বলেছি ফ্রিল্যান্সিং কোন
নির্দিষ্ট একটি কাজ নয়। এখানে নানা ধরনের কাজ পাওয়া যায়। ভিডিও এডিটিং,
কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি। নিচে এমন কিছু টিপস দেয়া হলো
যেগুলো স্কিল ডেভেলপ করার জন্য সাহায্য করবেঃ
- একটি নির্দিষ্ট স্কিল বেছে নিন।
- অনলাইন কোর্স ও ট্রেনিং করুন।
- প্র্যাকটিস করুন নিয়মিত।
- ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড ফলো করুন।
- রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করুন।
মার্কেটপ্লেস প্রোফাইল তৈরি করুন
আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন তারপর আপনার সবচেয়ে জরুরী কাজ হল একটি
প্রফেশনাল মার্কেটপ্লেস প্রোফাইল তৈরি করে ফেলা। এই প্রোফাইল আপনার ক্লায়েন্টের
কাছে আপনার প্রথম পরিচয় হিসেবে কাজ করবে। তাই এই প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় এবং
প্রফেশনাল করে তৈরি করতে হবে। কাজ পাওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে আপনার
প্রোফাইলের প্রেসেন্টেশনের উপর। আপনি যখন প্রোফাইল তৈরি করবেন তখন সঠিক
মার্কেটপ্লেস নির্বাচন করতে হবের
প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি দিতে হবে। আপনি সেলফি বা অপ্রফেশনাল কোন ছবি দিবেন না।
আপনার স্কিল অভিজ্ঞতা এবং কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে এবং ক্লাইয়েন্ট কেন আপনাকে
বেছে নিবে সেটা বায়োতে লিখতে হবে। আপনাকে স্কিল ও ট্যাগ যোগ করতে হবে।
মার্কেটপ্লেসে সঠিক কীওয়ার্ড যোগ করলে আপনার প্রোফাইল খুব সহজে খুঁজে পাওয়া
যাবে। তাই স্কিল ডেভেলপ করার পর মার্কেটপ্লেস প্রোফাইল তৈরি করে ফেলুন।
আকর্ষণীয় গিগস তৈরি করুন
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য আপনাকে আকর্ষণীয় গিগস তৈরি করতে
হবে। যখন আপনি কোন একটা দক্ষতা অর্জন করে ফেলবেন এবং আপনি কাজ করার জন্য পুরোপুরি
ভাবে প্রস্তুত হয়ে যাবেন তখন আপনাকে এই কাজটি করতে হবে। ফাইবার বা এই ধরনের
প্লাটফর্মে গিগস তৈরি করলে আপনার সেবা প্রদর্শনের দোকান হিসেবে ধরা হবে এটিকে।
বাস্তবে উদাহরণের সাথে মিল রেখে বলা যায়,
একটা বাজারে দোকান সাজালে যেমন ক্রেতা আকৃষ্ট হয় তেমনি এভাবে আপনি যদি সঠিকভাবে
গিগস সাজান তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার দিকে আগ্রহী হবে। তখন আকর্ষণীয় টাইটেল
ব্যবহার করবেন এবং বেসিক, স্ট্যান্ডার্ড ও প্রিমিয়াম এই তিনভাবে প্যাকেজ অফার
করতে হবে। আপনাকে আকর্ষণীয় ছবিও ভিডিও এড করতে হবে। এবং রিভিউ ও ডেলিভারি টাইম
উল্লেখ করার মাধ্যমে ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
পোর্টফলিও শক্তিশালী করুন
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম গুলোর মধ্যে একটি জরুরী ধাপ হলো পোর্টফোলিও
শক্তিশালী করা। যখন আপনি আকর্ষণীয় গিগস তৈরি করে ফেলবেন তখন আপনার কাজ হল
পোর্টফোলিও প্রোফাইল তৈরি করে সেটাকে শক্তিশালী ভাবে স্থাপন
করা। ক্লায়েন্টরা সব সময় এমন ফ্রিল্যান্সারকেই অগ্রাধিকার দিবে যার কাজের
সরাসরি কোন নমুনা দেখাতে পারবে। কারণ প্রমাণ এর মাধ্যমেই মানুষ বেশি বিশ্বাস করে।
আর পোর্টফোলিও যত ভালোভাবে সাজাতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি কাজ পাবেন।
আরও পড়ুনঃ বিকাশ পেমেন্টে ঈদের কেনাকাটা
পোর্টফলিও শক্তিশালী করার জন্য আপনাকে সব কাজ না দিয়ে শুধু যেগুলো মানসম্পন্ন ও
প্রফেশনাল এবং আকর্ষণীয় দেখায় সেগুলোই পোর্টে যোগ করতে হবে। আপনাকে বিভিন্ন
স্কিল দেখাতে হবে। যদি আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হন তবে আপনাকে লোগো, বিজনেস
কার্ড, ব্যানার এগুলো আলাদা আলাদা নমুনা দেখাতে হবে। আপনার ডিজাইন করা নতুন
ওয়েবসাইট এরকমভাবে উপস্থাপন করুন। এতে করে আপনার দক্ষতা সহজে বুঝতে পারবে।
ক্লায়েন্ট রিভিউ সংগ্রহ করুন
ফ্রিল্যান্সিং জগতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলতে ক্লায়েন্ট রিভিউ খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর পরের ধাপে আমরা নিয়ে এসেছি ক্লায়েন্ট রিভিউ সংগ্রহ
সম্পর্কে। আপনি যদি নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে কাজ পাওয়ার জন্য হিমশিম
খেয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু যদি আপনি পজিটিভ রিভিউ সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে আপনার
জন্য পরের কাজগুলো পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। তাই ক্লায়েন্টের পজিটিভ রিভিউতে সব
সময় বেশি অগ্রাধিকার দিবেন।
এর জন্য আপনাকে সময় মতো কাজ শেষ করতে হবে। হাতের কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে
হবে যেন আপনার রিভিউ পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। যোগাযোগে আপনাকে প্রফেশনাল হতে
হবে। ক্লায়েন্টের মেসেজের দ্রুত রিপ্লাই দিতে হবে। যদি ক্লায়েন্ট কোন কাজ
সম্পর্কে কনফিউজড থাকেন তাহলে গাইড দিতে হবে। এইসব কাজ করার পর ক্লায়েন্টের থেকে
ফিডব্যাক চাইবেন। ক্লায়েন্টের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলে রিভিউ নিতে হবে।
কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করুন
উপরের সব ধাপ গুলো খুব ভালোভাবে অনুসরণ করার পর আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে
কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করার উপর। একজন ক্লায়েন্ট তখনই আপনার উপর সন্তুষ্ট
থাকবে যখন আপনি তাকে সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে পারবেন। যদি আপনার সাথে
কমিউনিকেশন করতে তার অসুবিধে হয় তাহলে এটি একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আপনার
কাজের উপর। তাই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কিভাবে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল
ডেভেলপ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে লেবু পাতার ব্যবহার
সেজন্য আপনাকে স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে বা স্পষ্ট ভাবে মেসেজ লিখতে হবে।
ক্লায়েন্ট যখন আপনাকে মেসেজ বা ইমেইল করবে সময়মতো আপনাকে রিপ্লাই দিতে হবে। এবং
ক্লায়েন্টের সাথে ভদ্র ও প্রফেশনাল ভাবে কথা বলতে হবে। ক্লায়েন্ট যেটা চাইছে
সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে, শুনতে হবে এবং তারপর উত্তর দিতে হবে। এর পাশাপাশি
আপনার ভাষার দক্ষতা বাড়াতে হবে। এবং সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে।
সময় ব্যবস্থাপনা আয়ত্ত করুন
ফ্রিল্যান্সিং জীবন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল সময় ব্যবস্থাপনা। তাই এটিকে আমরা এর
পরের ধাপেই নিয়ে এসেছি। ফ্রিল্যান্সিং জগতে কোন অফিস টাইম থাকে না। তাই আপনার
নিজের সময়কে নিজেই ঠিকভাবে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন
যারা কাজ পেলেও সময়মতো শেষ করতে পারেন না। যার কারণে ক্লায়েন্ট হারিয়ে ফেলেন।
আবার অনেকে রাত জেগে অযথা সময় নষ্ট করেন যার কারণে কাজ করতে পারেন না।
তাই আপনাকে দৈনিক রুটিন তৈরি করতে হবে। কখন কাজ করবেন কখন বিশ্রাম নিবেন সেই
রুটিন তৈরি করে ফেলুন। কোন কাজটা আগে শেষ করতে হবে এবং কোন কাজটা পরে করতে হবে
সেটিও ঠিক করুন। সব সময় নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার অভ্যাস করুন। আপনি
চাইলে ২৫ মিনিট কাজ করুন, ৫ মিনিট রেস্ট নিন আবার ২৫ মিনিট কাজ করুন। এভাবে আপনার
কাজের গতির ধারা একই থাকবে।
প্রতিযোগিতেমূলক মূল্য নির্ধারণ করুন
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পর আপনি কাজ পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হবে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা। নতুন ফ্রিল্যান্সার যারা আছেন তারা খুব কম দাম
দিয়ে কাজ করে। আবার কেউ কেউ অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেশি মূল্য দাবি করে ফেলে। যার ফলে
ফ্লায়েন্ট আগ্রহ হারিয়ে তার কাছে আর কাজ দিতে চায় না। তাই আপনাকে এই সম্পর্কে
ভালোভাবে জ্ঞান রাখতে হবে। আপনাকে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে। যারা আপনার মত স্কিল
ক্যারি করে মার্কেটপ্লেসে তারা কি দাম নিয়ে কাজ করছে সেটা দেখতে হবে। আপনি যদি
নতুন হন তাহলে আপনাকে কম রেটে কাজ শুরু করতে হবে।
যত অভিজ্ঞতা বাড়বে তত আস্তে আস্তে রেট বাড়াবেন। আপনি সহজ কাজের জন্য আলাদা রেট
নির্ধারণ করবেন আর জটিল কাজের জন্য আলাদা রেট নির্ধারণ করবেন। ক্লায়েন্ট কি
বাজেট নিয়ে আসছে সে বাজেটটা আপনাকে বুঝতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে
যুক্তিসঙ্গত একটা রেট অফার করতে হবে। আবার শুধুমাত্র কাজ পাওয়ার জন্য খুব কম
দামও নিবেন না। তাহলে এতে আপনার দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে। তাই সঠিক
মূল্য নির্ধারণ মানে শুধু টাকা নয় বরং আপনার কাজের মান আর প্রফেশনাল ভ্যালু
প্রকাশ করা।
মন্তব্যঃ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান এবং
যদি বুঝে উঠতে না পারেন কিভাবে সেটা শুরু করবেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার
জন্যই ছিল। শুরু করার ধাপ থেকে নিজেকে কিভাবে আস্তে আস্তে ডেভেলপ করবেন এবং
কিভাবে কাজ পাবেন সেগুলো নিয়েও আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি নতুন ফ্রিল্যান্সার হন। বা যদি মনে করেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন তাহলে
আমাদের আজকের দেওয়া গাইড লাইনটি অনুসরণ করুন। এটি অনুসরণ এবং বাস্তবে
প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারবেন এবং আস্তে আস্তে টাকা
ইনকাম করাও শুরু করতে পারবেন। একবার যদি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন তাহলে আপনি
বুঝে যাবেন পরে আপনাকে কি করতে হবে। ভিন্ন ধরনের এমন সব আর্টিকেল পেতে
আমাদের সাথেই থাকুন।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url