বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত বিষয়াদি নিয়ে আপনাদের আজকের আর্টিকেলে জানানো হবে। বাংলাদেশের ডিভোর্সের বিষয়টি শুধু আইনি সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুভূতির সাথে জড়িত।
পারিবারিক বন্ধন ছেদ ঘটাতে যখন অনেকেই বাধ্য হন তখন তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় কিছু জটিল প্রক্রিয়া আইন ও দায়িত্বের প্রশ্ন। বিশেষত, মুসলিম সমাজে তালাক নিয়ে রয়েছে ধর্মীয় বিধান আইনি ধাপ এবং সামাজিক প্রভাব।
পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
- বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
- ডিভোর্সের সংজ্ঞা ও প্রেক্ষাপট
- ডিভোর্সের প্রধান কারণসমূহ
- বাংলাদেশে ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়া
- নারী ও পুরুষের অধিকার
- ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও শরিয়ত
- ডিভোর্স পরবর্তী করণীয় ও দায়িত্ব
- আদালতের মাধ্যমে তালাকের ধরন
- ডিভোর্সের প্রভাব ও সামাজিক বাস্তবতা
- মন্তব্যঃ বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত জানতে আগ্রহীদের কিছু বিষয় জানা জরুরি।
বাংলাদেশের ডিভোর্স একটি সংবেদনশীল বিষয়ে যেটি একজন ব্যক্তি, একটি পরিবার, এমনকি
পুরো সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি আইনি চুক্তি
বাতিল হয় না বরং এটিতে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় বিধান, সামাজিক বাস্তবতা এবং মানসিক
ভারসাম্যের প্রশ্ন। বর্তমান যুগে পারিবারিক জীবনের দাম্পত্য কলহ এবং বিশ্বাসের
ভাঙ্গন, পারস্পরিক অবিশ্বাস এমনকি অবিচার,
নির্যাতনের কারণে অনেক দম্পতি বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ডিভোর্স
শুধুমাত্র আবেগের সিদ্ধান্ত না হয়ে এটি হতে হবে সচেতন, তথ্যভিত্তিক এবং আইনি
কাঠামোর ভেতর পরিচালিত। এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বাংলাদেশে
ডিভোর্সের আইন, তালাকের প্রক্রিয়া, মুসলিম পারিবারিক আইন এবং ডিভোর্স পরবর্তী
করণীয় সম্পর্কে। এবং আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনার যে প্রশ্নের উত্তর গুলো পাবেন
সেগুলো হলোঃ
- ডিভোর্সের প্রক্রিয়া বাংলাদেশে কিভাবে চলে।
- তালাক কি শুধুই কাগজের স্বাক্ষর নাকি কার্যকর ভূমিকা রয়েছে।
- নারী বা পুরুষ কার কোন অধিকার আছে।
- ইসলামী শরীয়ত ও দেশের আইন কি একসাথে চলে।
ডিভোর্সের সংজ্ঞা ও প্রেক্ষাপট
ডিভোর্স শব্দটির অর্থ হল বিবাহ বন্ধনের আইনগতভাবে অবসান। কাজেই, যে প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনের অবসান ঘটে তাকে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ বলে।
ডিভোর্স তখনই প্রয়োগ হয় যখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব
হয় না এবং দুজনেই বা একজন বিচ্ছেদ চায়। বাংলাদেশের ডিভোর্স মূলত পারিবারিক আইন
এবং ধর্মীয় বিধানের আলোকে পরিচালিত হয়ে থাকে। মুসলিম সমাজের এটিকে তালাক বলা
হয়। হিন্দু বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন
প্রক্রিয়া।
তবে আজকে আমরা শুধু মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করব। বিশ্বাসঘাতকতা,
পারস্পরিক অবিশ্বাস, আর্থিক চাপ, পারিবারিক হস্তক্ষেপ এবং মানসিক ও শারীরিক
নির্যাতনের মত বিষয় বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিভোর্সের ফলে
সন্তানদের মানসিকতায়, নারীর নিরাপত্তা এবং পুরুষের সামাজিক দায়িত্ববোধে প্রভাব
পড়ে। বিবাহ যেমন একটি সম্মানজনক সম্পর্ক, তেমনি ডিভোর্স একটি সম্মানজনক
পরিসমাপ্তি। কিন্তু যদি সেটি আইন মেনে মর্যাদা বজায় রেখে করা হয় তখনই কেবল
সম্মানজনক পরিসমাপ্তি।
বাংলাদেশ সরকার ডিভোর্স প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ ও সহজ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ
গ্রহণ করেছেন। এই পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুসলিম পারিবারিক আইন
অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালাসমূহ। এর সাথে তালাক নোটিশ, সময়সীমা,
রেজিস্ট্রেশন এবং তালাকের পর নারী ও সন্তানের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়েও আইনি
ব্যবস্থা রয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী অধিকার আদায়ের বিষয়ে পারিবারিক আদালত
আইন, ২০২৩ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডিভোর্সের প্রধান কারণসমূহ
বাংলাদেশের বিবাহ বিচ্ছেদের হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এর পেছনে কিছু মূল কারণ
দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে যেগুলো সময় মতো চিহ্নিত করে সমাধান না করলে সম্পর্ক
ভেঙে পড়তে বাধ্য। নিচে উল্লেখযোগ্য এমন কিছু কারণ তুলে ধরা হলোঃ
- পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব।
- অতিরিক্ত ঝগড়া এবং সন্দেহ।
- আর্থিকভাবে অনিশ্চয়তা।
- পরিবারের অন্যদের হস্তক্ষেপ।
- যৌন জীবনে অস্বাভাবিকতা।
- অবিশ্বস্ততা বা পরকীয়া।
- প্রযুক্তির অপব্যবহার।
অনেক সময় শ্বশুরবাড়ি বা বাবার বাড়ির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ স্বামী স্ত্রীর
ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ফাটল ধরায়। এটি সুখে দাম্পত্য জীবনের অন্যতম অংশ হলো
সামঞ্জস্যপূর্ণ যৌন জীবন। এখানে সমস্যা হলে দাম্পত্য অস্বস্তি, বিরক্তি ও
দূরত্ব বাড়ে যা ডিভোর্সের দিকে ঠেলে দেয়। সম্পর্কে বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া, কারো
বাইরে সম্পর্ক থাকা বা মিথ্যা বলা এসবই গভীর আঘাত করে যা বিবাহ বিচ্ছেদের বড়
কারণ হতে পারে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি, গোপন বার্তা চালাচালি কিংবা
মোবাইলের ব্যবহারের গোপনীয়তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ডিভোর্সের কারণ।
বাংলাদেশে ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়া
ডিভোর্স ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন এবং পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ অনুযায়ী
পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে ডিভোর্স বা তালাক একটি আইনসম্মত ও পর্যায়ে ভিত্তিক
প্রক্রিয়া। স্বামী বা স্ত্রী উভয়েই এই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিবাহ বিচ্ছেদ
ঘটাতে পারেন। নিচে ধাপ আকারে নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- লিখিত নোটিশ প্রদান।
- ৯০ দিনের অপেক্ষার সময়।
- সমঝোতা বোর্ড গঠন।
- তালাক কার্যকর হওয়া।
- তালাক রেজিস্ট্রেশন।
- পারিবারিক আদালতের মামলা।
যদি ৯০ দিন পার না হয় তাহলে তালাক কার্যকর হয় না। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির
একটি সমঝোতা বোর্ড গঠন করেন। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হলেন চেয়ারম্যান অথবা
মেয়র। ৯০ দিনের মধ্যে পক্ষদ্বয়ের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করে এই
বোর্ড। ৯০ দিন যদি শেষ হয়ে যায় এবং কোন সমঝোতা না হয় তাহলে তালাক আইনিভাবে
কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। উক্ত সময়ের পরে উভয়পক্ষ নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার স্বাধীনতা লাভ করে থাকেন। তালাক কার্যকর হওয়ার পর এটি তালাক রেজিস্টার
বইতে লিপিবদ্ধ করতে হয়।
রেজিস্ট্রেশন না করলে অনেক ক্ষেত্রেই আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যদি
রেজিস্ট্রেশন না করা হয় তাহলে নতুন বিয়েতে বাধা হতে পারে অথবা সম্পত্তির
অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে এমনকি সামাজিকভাবে ও কাগজে-কলমে বৈধতা না থাকতে
পারে। যদি স্ত্রী তালাক চান তবে তিনি পারিবারিক আদালতে মামলা করে বিচ্ছেদের
আবেদন করতে পারেন। আদালত সমস্ত বিষয়ে শুনে রায় দেন এবং তালাক কার্যকর করেন।
তালাকের সময় মোহরানা, ভরণপোষণ, সন্তানের অধিকার ইত্যাদি বিষয়ের আইনগত সমাধান
নেওয়া যায়।
নারী ও পুরুষের অধিকার
বিবাহ বিচ্ছেদ মানেই শুধু আলাদা হয়ে যাওয়া নয় বরং এটি এমন একটি আইনগত ও
মানবিক বিষয় যেখানে উভয় পক্ষের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করা জরুরী। পারিবারিক
আইন, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ, ১৯৬১ ও পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩ এই আইন
সমূহতে নারী ও পুরুষের কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। প্রথমত নারীর অধিকার
নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- মোহরানা পাওয়ার অধিকার।
- সন্তানের হেফাজত ও খরচের অধিকার।
- আশ্রয় ও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার।
- আইনি প্রতিকার চাওয়ার অধিকার।
- তালাক সম্পর্কে জানার ও আপত্তি জানানোর অধিকার।
আরও পড়ুনঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ
তালাকের ৯০ দিনের মধ্যে নারী চাইলে সমঝোতার মাধ্যমে সংসার টিকিয়ে রাখার
প্রচেষ্টা নিতে পারেন। দ্বিতীয় ধাপে এবার পুরুষের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা
যাক। পুরুষের অধিকার নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- তালাক প্রয়োগ করার অধিকার।
- সন্তানের দায়িত্ব ভাগাভাগির অধিকার।
- আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার।
- সম্পদের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা দাবি করার অধিকার।
যথাযথ নোটিশ এবং ৯০ দিনের প্রক্রিয়া ও রেজিস্ট্রেশন সহ মুসলিম পুরুষ তালাকের
অধিকার রাখেন। মা যদি সন্তানের দায়িত্ব পান তাহলে পিতা সন্তানের ভরণপোষণ দেন।
যদি মা অযোগ্য বিবেচিত হন তবে হেফাজতের অধিকার পিতারও থাকতে পারে। স্বামীর
বিরুদ্ধে মিথ্যা অথবা হয়রানিমূলক অভিযোগ আনলে, ওই পুরুষ আদালতের মাধ্যমে
প্রতিকার চাইতে পারেন। তালাককালীন বা পরবর্তী সময়ে সম্পদ ভাগ বা অধিকার বিষয়ে
পুরুষেরও স্বচ্ছতা দাবি এবং বিবাহ চলাকালীন দেওয়া উপহারের অধিকার ইত্যাদি থেকে
উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও শরিয়ত
ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র চুক্তি যেটি শুধু সামাজিক বন্ধন নয় বরং দুটি মানুষের
সমন্বিত এক মহান দায়িত্ব। তবে একসাথে চলার পথে অনেক সময় এমন পরিস্থিতির
সম্মুখীন হতে হয় যখন একসঙ্গে থাকা আরো বেশি অন্যায়, অশান্তির কারণ হয়ে
দাঁড়ায়। ঠিক তখনই তালাক বা ডিভোর্স একটি শেষ উপায় হিসেবে শরীয়ত অনুমোদন
দেয়। সূরা আল বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, তালাক দুইবার
দেওয়া যেতে পারে। এরপর হয় সদ্ভাবে স্ত্রীকে রাখবে নয়তো উত্তম ভাবে বিদায়
দেবে।
তালাক ইসলামে বৈধ কিন্তু অপছন্দনীয়। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল
কাজ হলো তালাক। কাজেই ইসলাম তালাককে নিষিদ্ধ করেনি কিন্তু অপ্রয়োজনে তালাক
দেওয়া কে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। তালাক দিতে হলে স্ত্রী পবিত্র অবস্থায়
থাকতে হবে, সহবাস ছাড়া ওই মাসে তালাক ঘোষণা, নোটিশ প্রদান, সাক্ষী রাখা, ইদ্দত
পালন, সমঝোতার চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ম শরীয়ত পালন করতে বলে। এছাড়াও শরীয়ত
সমঝোতা ও সালিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পর্ক ঠিক করে নেওয়া হোক এই বিষয়ে
গুরুত্ব দেয়।
ডিভোর্স পরবর্তী করণীয় ও দায়িত্ব
বিবাহ বিচ্ছেদের পর শুধু একটি সম্পর্কের ঘটে না বরং শুরু হয় একটি নতুন
অধ্যায়ের। যেখানে উভয় পক্ষের জন্য থাকে কিছু আইনি, সামাজিক এবং নৈতিক
দায়বদ্ধতা। ডিভোর্সের নোটিশ, আদালতের আদেশ, তালাক রেজিস্ট্রেশন এর সার্টিফিকেট
সহ যাবতীয় আইনি ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করা জরুরী। তালাক কার্যকর হওয়ার আগে ৯০
দিনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃক তারা রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত
করা দরকার। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মুসলিম নারীদের তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর
ইজ্জত পালন বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুনঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
সন্তান কার কাছে থাকবে, দেখাশোনার দায়িত্ব এবং খরচ বাহনের দায়িত্ব নিয়ে
আদালতের মাধ্যমে হেফাজতের আদেশ নেওয়া যেতে পারে। নারী আয়ক্ষম না হলে ভরণপোষণ
পেতে পারেন। সন্তানদের জন্য নাফকাহ দাবি করা সম্ভব। নারীর ক্ষেত্রে ইদ্দত কাজ
শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে বৈধ নয় তাই পুনর্বিবাহের আগে শরীয়তীয় আইনে
দিকগুলো বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। ডিভোর্সের বড় একজন নারী বা পুরুষের মর্যাদা
ব্যক্তিত্ব সম্মান অটুট রাখতে হবে। গুজব অপবাদ বা নেতিবাচক সামাজিক চাপ থেকে
নিজেকে রক্ষা করা জরুরি।
আদালতের মাধ্যমে তালাকের ধরন
বাংলাদেশের কোন স্বামী স্ত্রীর নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্ককে আইনিভাবে ছিন্ন করতে
চাইলে তারা পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে
পারেন। এই বিচ্ছেদ একতরফা অথবা উভয় পক্ষের সম্মতিতে হতে পারে। আদালতের মাধ্যমে
তালাকের প্রধান ধরন গুলোর নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- স্বামীর একতরফাল তালাক।
- স্ত্রীর খোলা তালাক।
- তালাক তাফউইজ।
- পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স মামলা।
তাহলে তিনি পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন এবং আদালত উভয়পক্ষকে শুনে যদি
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অসম্ভব মনে হয় তবে স্ত্রীকে তালাকপ্রার অনুমতি দেয়।
স্ত্রীকে মোহর ফেরত দিতে হতে পারে তবে এটা আদালতের বিবেচনায় নির্ধারিত হয়।
বিয়ের সময় বা পরে স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দেন তাহলে তাকে
বলে তালাক তাফউইজ। এই বিষয়টি নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামে উল্লেখ থাকতে হয়।
স্ত্রী এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তালাক দিলে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর
৭ধারা নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ দিতে হয়।
যখন স্বামী তালাক দিতে অস্বীকার করেন বা স্ত্রীকে অযথা নির্যাতন করেন তখন
স্ত্রী চাইলে পারিবারিক আদালতে ডিভোর্সের মামলা করতে পারেন। এ প্রক্রিয়ায়
আদালত উভয় পক্ষকে ডাকেন এবং প্রমাণ ও শুনানির ভিত্তিতে আদালত বিচ্ছেদ আদেশ
দিতে পারেন। এই ধরনের তালাক আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয় এবং এটি
সম্পূর্ণরূপে আইনি বৈধ। বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত আলোচ্য বিষয়
উল্লিখিত আলোচনা সমূহ।
ডিভোর্সের প্রভাব ও সামাজিক বাস্তবতা
ডিভোর্স শুধু একটি আইনগত প্রক্রিয়া নয় বরং এটি একজন ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক
ও পারিবারিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তালাক যখন ঘটে তখন শুধুই দুটো মানুষ নয়,
পুরো পরিবার বিশেষ করে সন্তানরা হয়ে পড়ে চরম অনিশ্চয়তায়। বাংলাদেশে আজও
ডিভোর্সপ্রাপ্তদের নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে
যা তাদের মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। তালাকপ্রাপ্ত নারী বা পুরুষ ও এর উপরেই মানসিক
ও আবেগিক প্রভাব দেখা যায়। এমনকি সন্তানদের জীবনেও ভয়াবহ সাপ ফেলে।
সন্তানদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ হয় ভিন্নতর। অনেক সময় মা বাবার দ্বন্দ্ব তাদের
মনোজগতে অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা ও অবহেলার অনুভূতি তৈরি করে। ডিভোর্স প্রাপ্ত
নারীদের দিকে সমাজ এখনো দোষী বা ব্যর্থ হিসেবে থাকায় যা তাদের পুনর্বাসনকে
কঠিন করে তোলে। ডিভোর্সের পর অনেক নারী আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। ডিভোর্সের আগেও এবং পরেও পারিবারিক কাউন্সিলিং
মিডিয়েশন ও আইনি সহায়তা অত্যন্ত জরুরী। তালাক কোন পাপ নয় এটি কোন একজনের শেষ
চাওয়া মাত্র।
মন্তব্যঃ বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত
বাংলাদেশ ডিভোর্স প্রক্রিয়া বিস্তারিত আজকের কন্টেন্টে তুলে ধরা হয়েছে। ডিভোর্স
একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যা কেবল আবেগের বশে নেওয়া উচিত নয়।
এটি জীবনের মোড় ঘুরানো এক পদক্ষেপ যার প্রভাব পড়ে ব্যাক্তি, পরিবার ও সমাজে।
একটি সুস্থ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই হলো ইসলাম, আইন এবং মানবিকতার চাওয়া। কিন্তু
যখন সবকিছু চেষ্টা করেও কাজ হয় না তখন ডিভোর্স হতে পারে সম্মানজনক মুক্তির পথ।
তাই এ নিয়ে দ্বিধা নয় বরং সচেতন চিন্তা ভাবনা করা দরকার।
ডিভোর্সের আগে পারিবারিক কাউন্সিলিং নিন। আইন জেনে সঠিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়ে
ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিন এবং এর পাশাপাশি শরীয়তের বিধান বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় সন্তানদের স্বার্থ সবসময় প্রাধান্য দিতে হবে।
বিশ্লেষণধর্মী আইনি এমন কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত পরিদর্শন করুন
এবং আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের ওয়েবসাইটটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url