নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ পরিবার ও সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন বর্তমানে এমন একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা যেটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনছে।

নারী-ও-শিশু-নির্যাতন-দমন-অধ্যাদেশ

তবে এই আইনের দ্বারা নারী ও শিশুকে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য বিধান করা হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা আইনটির মূল দিক, কার্যকারিতা, মামলা দায়েরে প্রক্রিয়া এবং শাস্তি সম্পর্কে জানব।

পেজ সূচিপুত্রঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশটি সর্বশেষ ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে অধ্যাদেশ নম্বর ১১ হিসেবে জারি হয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্যোগ জনক হারে বাড়ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালে প্রণীত হয়। তবে সময়ের সাথে এই আইন সংশোধিত হতে থাকে। সর্বশেষ ২০২৫ সালে এই আইনটি সংশোধিত করে এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আইনটির আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আইনটির আওতায় নির্যাতনের ঘটনায় বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত,

এবং ডিএনএ ছাড়াও প্রমাণ গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী ও শিশুদের প্রতি শারীরিক, মানসিক, যৌন এবং আর্থিক নির্যাতনের প্রতিরোধে বিশেষ বিধান এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে এই আইনটি। নির্যাতনের ঘটনা কমাতে ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও এই আইনটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। কাজেই এই আইন টি শুধুমাত্র শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। আজকের আর্টিকেল এ আমরা জেনে নেবো এই আইনের প্রধান বিষয়বস্তু, সংশোধিত ধারা, বিচারিক কাঠামো, অপরাধ প্রমাণের পদ্ধতি ও আইনি সুরক্ষার দিক গুলো সম্পর্কে।

নির্যাতনের সংজ্ঞা ও ব্যাখা

যে সকল কার্যাবলী কোনো নারী বা শিশুর শারীরিক, মানসিক, যৌন অথবা সামাজিক ক্ষতি অথবা যন্ত্রণা সৃষ্টি করে তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন বলে। নারী ও শিশুর প্রতি যেকোনো অবৈধ আক্রমণ, চাপ সৃষ্টি, ধর্ষণ, নিপীড়ন, ভীতি প্রদর্শন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন অথবা অবহেলা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নারী নির্যাতনের আয়োতায় পড়ে। এই নির্যাতন কেমন হতে পারে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • মানসিক নির্যাতন বলতে গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও হুমকি হতে পারে।
  • শারীরিক নির্যাতন বলতে মারধর, দগ্ধ করা, আঘাত ইত্যাদি কে বোঝায়।
  • অর্থনৈতিক নির্যাতন বলতে ভরণপোষণ বন্ধ করে দেওয়া কে বোঝায়।
  • যৌন নির্বাচন নির্যাতন বলতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানিকে বোঝায়।
  • আইনি নিপীড়ন বলতে মিথ্যা মামলা বা হুমকি কে বোঝায়।
নারী নির্যাতনের প্রদত্ত এই সংজ্ঞাটি শুধুমাত্র পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি বাসা, রাস্তাঘাট, কর্মস্থল, স্কুল-কলেজ এমনকি অনলাইনেও প্রযোজ্য। শিশু ও নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতনের জন্য দ্রুত বিচার, কঠোর শাস্তি এবং বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় এমনভাবে এই আইনটি গঠিত হয়েছে। আইনটির ধারা ৩ ও ৪ এ ধর্ষণ এবং যৌতুক জনিত নির্যাতনের বিস্তারিত সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এবং আইনটির ধারা ১১ থেকে ১৩ তে শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশোধিত ধারা ও শাস্তি

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ আইনটির ২০২০ এবং ২০২৫ সালের সংশোধনী অনুযায়ী যৌতুক জনিত নির্যাতন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অগ্নিদগ্ধ ও শিশু নির্যাতন ইত্যাদি অপরাধগুলোর শাস্তি আগের চেয়ে আরো কঠোর ও সুসংগতভাবে বিধান করা হয়েছে। নিচে এমন ধারাসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

  • ধারা ৯ ধর্ষণঃ বর্তমানে ধর্ষণের শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড। এবং যদি ধর্ষণের ফলে ভুক্তভোগী মৃত্যু হয় তাহলে অপরাধীর জন্য মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
  • ধারা ১১ যৌতুকের কারণে মৃত্যুঃ যদি কোন মহিলা যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান তাহলে দোষী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
  • ধারা ১৩ শিশু নির্যাতনঃ যদি কোন শিশুকে নির্যাতন অথবা ভয়ভীতি প্রদর্শন বা যৌন নিপীড়ন করা হয় সেই ব্যক্তির শাস্তি হতে পারে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ক্ষেত্র ভেদে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে।
এই আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমটি আরো বেশি সক্রিয় করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১৮০ দিনের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মত মামলা নিষ্পত্তি করবেন। এবং বর্তমানে নারী এবং শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশটির ২০২৫ এর সংশোধনীতে ডিজিটাল স্বাক্ষর গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে যেটি দ্রুত বিচার নিশ্চিত করবে।

ধর্ষণের শাস্তি এবং বিচার

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং সংশোধিত ২০২০ এবং ২০২৫ অনুযায়ী ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে, কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা প্রতারণা, ভীতি কিংবা প্রলোভনের মাধ্যমে তার শরীরের গোপন স্থানে অথবা মুখে অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক পুরুষাঙ্গ, অঙ্গ অথবা বস্তু প্রবেশ করানো কে ধর্ষণ বলে। আইনটির ধারা ৯ অনুসারে ধর্ষণের শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণের ফলে যদি ভিকটিমের মৃত্যু হয় তাহলে অপরাধীকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়াও আদালত চাইলে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দ্রুত বিচার ও বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচার কার্যকর করে থাকে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করে যাতে ভিকটিম ন্যায় বিচার পায়। এ ধরনের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও তদন্তের নারী পুলিশ কর্মকর্তা, মেডিকেল রিপোর্ট এবং ডিজিটাল আলামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্ষণ অপরাধটি গুরুতর হওয়ায় এর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে। এবং বিশেষ ট্রাইবুনলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে দ্রুত বিচার করা যায়।

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শাস্তি কত

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করা বা প্রাণনাশের চেষ্টা করা একটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ যেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং এটির সংশোধিত ২০২০ ও ২০২৫ অধ্যাদেশ অনুযায়ী চালিত হয়। এই আইনটির ধারা ১১ তে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শাস্তির বিধান দেওয়া আছে। ধারাটিতে বলা হয়েছে, যৌতুকের জন্য শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শাস্তি হতে পারে ৫ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। যদি কোন ব্যক্তি যৌতুক জনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় তাহলে উক্ত ব্যক্তি কে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত সাজা দেওয়া যাবে।
নারী-ও-শিশু-নির্যাতন-দমন-অধ্যাদেশ
এছাড়াও এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেগুলো হলো, যদি কোন ব্যক্তি যৌতুক আদায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অথবা মানসিক নির্যাতন করে তাহলে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আবার যদি কোন ব্যক্তি যৌতুকের কারণে বাসা থেকে তার স্ত্রীকে বের করে দেয় কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয় তাহলে সেটিও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কাজেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এবং এটির সংশোধন সমূহতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এমন বিধান প্রণয়ন করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে।

প্রমাণপত্র এবং সাক্ষ্যগ্রহনের নিয়ম

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এর মামলা সমূহের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র এবং সাক্ষ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিকটিমের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয়। নিচে প্রমাণপত্র এবং সাক্ষ্য গ্রহণের কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ

  • নারী পুলিশের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ।
  • গোপনভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ।
  • মেডিকেল রিপোর্ট গ্রহণ।
  • ভিডিও ফুটেজ অথবা ডিজিটাল প্রমাণ।
  • এই আইনের ধারা ৭৩ অনুসারে সাক্ষী পরীক্ষা।
  • সাক্ষ্য গ্রহণের সময়সীমা।
  • ভুয়া সাক্ষ্য দিলে শাস্তির বিধান।
ধর্ষণের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ভিকটিম মানসিক বিপর্যয়গ্রস্ত হয়ে থাকেন। ধর্ষণের কারণে ভিকটিমের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক ক্ষতি ও হয়ে থাকে। যদি নারী পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় তাহলে ভিকটিমের মানসিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে থাকে। ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়ে ভিকটিমের ওপর সামাজিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার কারণে আদালত অনেক সময় গোপন ভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকেন। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে মামলাটির সত্যতা নিশ্চিত এর জন্য মেডিকেল রিপোর্ট এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ পরীক্ষা,
ইনজুরির রিপোর্ট এর মত মেডিকেল রিপোর্টগুলো আদালতের সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করে থাকে। আইন সংশোধনের পর আদালত বর্তমানে সিসিটিভি ফুটেজ, অডিও রেকর্ডিং, মোবাইল মেসেজ, চ্যাট হিস্ট্রি ইত্যাদি ডিজিটাল প্রমাণ গ্রহণ করছেন। নারী শিশু নির্যাতন এর সকল মামলা গুলোর সাক্ষ্যগ্রহণ এর সময় সাক্ষী পরীক্ষা ধারা ৭৩ অনুসারে হয়ে থাকে। এবং এই ধরনের বিচার সাধারনত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। ধর্ষণের মতো বিষয় যদি কেউ ভুয়া সাক্ষী দেয় তাহলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৯৩ অনুসারে তাকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা প্রদান করা হবে।

বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচার পদ্ধতি

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুসারে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো সাধারণত বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ফলে এ ধরনের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয় এবং নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সরকারের মাধ্যমে গঠন করা হয়। একজন জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত হন। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা বিচার করার সময় মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
নারী-ও-শিশু-নির্যাতন-দমন-অধ্যাদেশ
কারণ যদি দ্রুত নিষ্পত্তি না করা হয় তাহলে অনেক সময় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা কার্যত হয়ে ওঠে না। ট্রাইবুনাল সাধারনত মামলা তদন্ত ও চার্জশিট দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শুরু করে করেন। ট্রাইবুনাল সাধারণত আইন অনুসারে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার রায় দেওয়ায় বাধ্য থাকেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার নিষ্পত্তি করার সুবিধা হল ভিকটিমকে সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হয় না। এতে করে নারী ও শিশু উভয় ভিকটিম এর মানসিক নিরাপত্তা রক্ষা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে ট্রাইবুনাল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

অপরাধীর জন্য শাস্তির মাত্রা

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ তে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। ২০২৫ সালের সংশোধনের মাধ্যমে সে শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়েছে। এটি অপরাধের ধরন, মাত্রা ও পরিণতির উপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়ে থাকে। এমন কিছু বিধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিধান হলো ধারা ৯। যদি কোন ব্যক্তির সাধারণ ধর্ষণ করে তাহলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড হবে। এবং ধর্ষণের ফলে ভিকটিমের যদি মৃত্যু হয় তাহলে মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক হিসেবে প্রদান করা হবে। ধারা ১১ তে বলা হয়েছে যৌতুকের কারণে নির্যাতনে কোন নারী মারা গেলে,
নির্যাতককে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হবে। ধারা ১৩ তে বলা হয়েছে সাধারণ নির্যাতন বা ভয়-ভীতি যদি কোন শিশুকে প্রদান করা হয় তাহলে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে।কিন্তু যদি যৌন নিপীড়ন বা গুরুতর অপরাধ করে তাহলে ১৪ বছর বা যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে। ধারা ৫ অনুসারে মুখ বা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে যদি এসিড নিক্ষেপ করা হয় তাহলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হবে এবং যদি গুরুতর ক্ষতি না হয় তাহলে সাত থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে।

নারী নির্যাতনের শিকার হলে করণীয়

একজন ভুক্তভোগী যিনি নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার তার ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াতে নানা ধরনের বিনামূল্য সহায়তা ও নিরাপত্তা এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকে। যদি কেউ নারী অথবা শিশু নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে তাকে কি করতে হবে নিচে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • প্রথমত দ্রুত নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ বা FIR দায়ের করতে হবে।
  • যদি থানায় গিয়ে অভিযোগ করার মত পরিস্থিতি না থাকে তাহলে ১০৯ হেল্পলাইনে ফোন করে সহায়তা নিতে হবে।
  • যদি ভুক্তভোগী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল চেকআপ ও রিপোর্ট তৈরি করবেন।
  • আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য জাতীয় আইন সহায়তা প্রদান সংস্থা (NLASO), BRAC, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি (BNWLA) অথবা ASK এই প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  • যদি ভুক্তভোগীর জীবন বা মানসিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকে তাহলে সরকার পরিচালিত নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
  • বিচার কার্যক্রম নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য সাক্ষ্য হিসেবে ভিডিও ফুটেজ, অডিও রেকর্ডিং, চ্যাট হিস্ট্রি, কল লিস্ট ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে।
  • বর্তমানে অনেক থানাতেই অনলাইন জিডি ও অভিযোগ ফ্রম রয়েছে। এছাড়াও মোবাইল অ্যাপ এ বা সরকারি সাইটে সরাসরি অভিযোগ জানানো যায় সেখানে অভিযোগ জানাতে হবে।
যদি কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয় বা নির্যাতনের শিকার হয় অথবা কোন শিশু নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে উপরোক্ত উপায় সমূহ অবলম্বনে মাধ্যমে সে আইনি সহায়তা পেতে পারে। তবে উল্লেখ্য যে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া অভিযোগ করে তাহলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১৯৩ অনুসারে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মন্তব্যঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংশোধনের মাধ্যমে নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে নারী ও শিশুর অধিকার আরো সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে বিস্তরভাবে আইনি বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত বিষয়াবলী ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোন নারী অথবা শিশু নির্যাতনের শিকার হলে তিনি কিভাবে আইনি সহায়তা পাবেন সে সম্পর্কেও বিস্তার ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকার। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে। নিজের অধিকার সবসময় নিজেকেই বুঝে নিতে হয়। কাজেই কোন নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয় তার কি অধিকার রয়েছে সেটি তার জানা অত্যন্ত জরুরী। নারী ও শিশুর আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পর্কে জানাতে আজকের আয়োজন। আইনি বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আলোচনা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url