সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা

সংবিধান কোন দেশের সর্বোচ্চ আইনি দলিল। সংবিধান একটি দেশের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণ করে এবং মানবাধিকার কে মৌলিক অধিকারের রূপান্তরিত করে। স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে একটি সংবিধান যা ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়।

সংবিধান-সংস্কার-সমস্যা-ও-প্রস্তাবনা
সময়ের সাথে এই সংবিধান সংশোধনের দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে এটি জরুরি বিষয় কেননা একটি সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন হতে থাকে যেটি সংবিধানের সাথে খাপ খাওয়ানো জরুরী। সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা নিয়ে আজকের আয়োজন।

পেজ সূচিপত্রঃ সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা

সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের সংবিধান কেবল একটি আইনি দলিল নয় বরং এটি বাঙ্গালি জাতির রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক চেতনা এবং ঐক্যবদ্ধ পরিচয়ের রূপরখা। ১৯৭২ সালের প্রণিত সংবিধান গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা কে নির্ভর করে রচিত হয়েছে। দিনের পরিবর্তন যেমন হচ্ছে তেমনি রাজনৈতিক বাস্তবতা, সামাজিক চাহিদা ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন হচ্ছ। এই সংবিধানের সাথে উক্ত বিষয় গুলো খাপ খাওয়ানোর জন্য সংবিধান টি সংস্কার করা তাই সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে। 

বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও ১৭ টি সংশোধনী পর্যালোচনা করলে এটি পরিলক্ষিত হয় যে এর অনেক অংশ সময়ের সাথে খাপ খায় না এবং বর্তমানে রাষ্ট্রে উদ্ভাবিত সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই সংবিধানে বর্ণিত ১৮ টি মৌলিক অধিকার আদায়ে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে সংবিধান সময়োপযোগী না হওয়ার জন্য। এ ছাড়াও বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচনেও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠেছে। আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান টি সংস্কার করা অতীব জরুরি।

মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা

যে সমস্ত মানবাধিকার কোন দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই সকল মানবাধিকার কে মৌলিক অধিকার বলা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে ২৭-৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মোট ১৮ টি মৌলিক অধিকার এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ২৬-৪৭ক পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩২, ৩৬, ৩৮, ৩৯, ৪১ এ যথাক্রমে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয় গুলো এমন ভাবে সজ্ঞায়ীত করা হয়েছে যেন এগুলো কোনোভাবেই নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করতে না পারে। 
কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতার সাথে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অযুহাতে এই অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। মৌলিক অধিকার বিরোধী কোন আইন বাতিল করা হয়েছে সংবিধানের ২৬ নং অনুচ্ছেদে। কিন্তু অধিকাংশ সময় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার সময় ২৬ নং অনুচ্ছেদের তোয়াক্কা করা হয় না। বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন করলে এই সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে। কাজেই, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হলেও সংবিধান টি সংস্কার করা প্রয়োজন রয়েছে। সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা সম্পর্কে জেনে নিন।

ক্ষমতার বিভাজন ও ভারসাম্য রক্ষা

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ রয়েছে। নির্বাহী বিভাগ, আইন প্রণয়ন বিভাগ ও বিচার বিভাগ এই তিনটি অঙ্গে বিভক্ত। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। সংবিধান এই তিনটি অঙ্গ কে ক্ষমতার স্পষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্যের নির্দেশ দিয়ে থাকে যাতে করে কোন বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এই নির্দেশনা প্রদান করা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংবিধানের ৫৫ নং অনুচ্ছেদে মন্ত্রিসভার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

এই অনুচ্ছেদ মতে মন্ত্রিসভা সংসদের কাছে জবাবদিহির জন্য দায়বদ্ধ থাকলেও অধিকাংশ সময় জবাবদিহিতা কার্যকর হয়ে ওঠে না। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭ এ বলা হয়েছে সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন। কিন্তু এরপরও নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এই বিধানটি লঙ্ঘিত হয়ে থাকে। সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদ রীট মামলার ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। কিন্তু বিচারপতি আগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থাকার কারণে সন্দেহের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কাজেই এই সকল সমস্যা নিরসনে সংবিধান টি সংস্কার প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্বশাসন

সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে তাকে নির্বাচন কমিশন বলে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রদান করে থাকেন। সংবিধান নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকলেও বাস্তবে রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপের কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়টির সন্দেহ  থেকে যায়। এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগটিও সন্দেহজনক হয়।
সংবিধান-সংস্কার-সমস্যা-ও-প্রস্তাবনা
নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করতে প্রয়োজন এমন আইন যা প্রণয়ন যোগ্য। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে করার কথা আইন অনুযায়ী। কিন্তু বাস্তবে সেটি হতে দেখা যায় না। অনেক সময় আইন বহির্ভূত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কর্তৃক সম্পাদিত হয়। নির্বাচন কমিশনের জন্য জনবল, বাজেট, নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর সহায়তার প্রয়োজন হয়। এইসব সম্পাদনের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায় আসার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। কাজেই সংবিধানটি সংস্কার প্রয়োজন।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বোঝায় নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন সংস্থার সব ধরনের প্রভাব হস্তক্ষেপ থেকে আদালত এবং বিচারকগণ সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একান্ত জরুরী। এটি গণতন্ত্রের মেরুদন্ড হিসেবেও বিবেচিত। বাংলাদেশ সংবিধান কর্তৃক বিভাগ স্বাধীনতার পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া থাকার সত্বেও বিচার ব্যবস্থাকে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে বিচারকগণের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থাকে। সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ এর একটি অংশ।
৯৮ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত বিচারকগণ নিয়োগের এখতিয়ার রাখেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাহী বিভাগের একজন সদস্য অথবা কর্মকর্তা। কাজেই যখন রাষ্ট্রপতির ওপর নিয়োগের এখতিয়ার বর্তায় তখন বিচার বিভাগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে। আবার আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন সংসদ সদস্যগণ। কাজেই এখানে সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, বিচারপতি রাজনৈতিক দলের লোকের দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ও স্বচ্ছতার জন্য সংবিধানটি সংস্কার প্রয়োজন।

সংবিধানের অনুচ্ছেদের স্পষ্টতা প্রসঙ্গে

অনুচ্ছেদের স্পষ্টতা বলতে বোঝায় প্রতিটি অনুচ্ছেদের ভাষা, অর্থ ও প্রয়োগ যেন স্পষ্ট হয় এবং সময়োপযোগী হয়। যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন তাই সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদের ভাষা অর্থ ও প্রয়োগ অবশ্যই সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।সংবিধান এই পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। এর পরেও সংবিধানে কিছু অনুচ্ছেদে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে অথবা ত্রুটি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ৭ নং অনুচ্ছেদ গ্রহণ করা যায়। ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সংবিধানের প্রাধান্য সম্পর্কে। কিন্তু কিভাবে সংবিধানে এটির ব্যত্য ঘটবে সেটি স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করা নেই।

৩৮ নং অনুচ্ছেদে নৈতিকতা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এটির সংবিধিবদ্ধ কোন ব্যাখ্যা দেওয়া নেই যার কারণে বিধিবদ্ধ আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদে ফ্লোর ক্রসিং এর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্লোর ক্রসিং বলতে বোঝায় দলত্যাগ অথবা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান করলে অবস্থানকারী সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হয়ে যায়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এই আইনটি সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী একটি অনুচ্ছেদ। যেখানে বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়। এই ধরনের ত্রুটি নিরসনের জন্য সংবিধানটি সংস্কার প্রয়োজন।

সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে

সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া হলো একটি দেশের সংবিধানের নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহ পরিবর্তন, সংযোজন বা বিলুপ্ত করার সাংবিধানিক ও আইনি পদ্ধতি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ প্রক্রিয়া, কারণ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সংশোধনের প্রক্রিয়া নির্ধারিত হয়েছে ১৪২ নং অনুচ্ছেদে। ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ঘটে সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতি যদিও প্রয়োজন হয় তবুও তার ভূমিকাটি আনুষ্ঠানিক।

এই প্রক্রিয়াতে গণভোটের কোন বিধান না থাকার ফলে সাধারণ জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ ব্যতি রেখেই একটি জাতীয় দলিলের গঠন বদলে যায়। ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ সদস্যগণ সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপন করে থাকেন।আপেক্ষিক দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এটি ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি যেমন সত্য তেমনি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার সুযোগ ও সৃষ্টি করতে পারে এই প্রক্রিয়াটি। কাজেই সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদটি সংস্কার করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্তমানে সংবিধানটি সংস্কার প্রয়োজন।

জনগনের অংশ গ্রহন ও স্বচ্ছতা

রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণের সক্রিয় এবং অর্থবহ সম্পৃক্ত তাকে জনগণের অংশগ্রহণ বলে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্মুক্ততা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণ হলো স্বচ্ছতা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। তাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব জনগণের হাতে আর তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপূর্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিগণিত হয় এটিই গণতান্ত্রিক সংবিধানের মূল চেতনা। বাংলাদেশের সংবিধানে ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। 
সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ণ, নির্বাচন, বাজেট প্রণয়নের মতো বিষয়গুলিতে জাতীয় কার্যক্রমে জনগণের সরাসরি মতামতের ব্যবস্থা নেই। যা ৭ নং অনুচ্ছেদ এর পরিপন্থী। এছাড়াও সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের কোন ব্যবস্থা তথা বিধান নেই। এতে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুপস্থিত থাকে। স্বচ্ছতার অভাব প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থ্‌ সংসদীয় কার্যক্রম এবং বিচার ব্যবস্থায় জনগণের আস্থার সংকট সৃষ্টি করে। জনগণের নিকট তথ্য গোপন রাখার মাধ্যমে সাংবিধানিক বিশ্বাসযোগ্যতা দুর্বল করে দেয়।

জাতীয় সংসদের কার্যক্রম চলাকালীন সরাসরি সম্প্রচার, তথ্য অধিকার আইন, জনমত জরিপ ও জনগণের অংশগ্রহণের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে গন শুনানির মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। আর যদি এই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা হয় তবে অবশ্যই সংবিধানটি সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। মোটকথা জনগণের সক্রিয়তার জন্য সংবিধানটি সংস্কার করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা অংশ হসেবে এটি পরিগণিত।

সাংবিধানিক আদর্শ ও বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে

একটি রাষ্ট্রের সংবিধানে যে মৌলিক মূল্যবোধ, দর্শন ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা নির্ধারিত থাকে তাকে সাংবিধানিক আদর্শ বলে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক আদর্শ সমূহ হচ্ছে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবাধিকার, এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব। সংবিধানের ২ নং অনুচ্ছেদ এবং প্রস্তাবনাতে মৌলিক আদর্শ গুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত রয়েছে।সংবিধানের আদর্শ কেবল নীতি নির্ধারণী নয় বরং এগুলো রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে কার্যকর ভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাধ্যতামূলক।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যায় এই আদর্শ গুলো অনেক সময় শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতিত্ব এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা, দুর্নীতি ও প্রশাসনের জবাবদিহিহীনতা সাংবিধানিক আদর্শের পরিপন্থী। আইনের শাসন একটি মৌলিক সাংবিধানিক আদর্শ হলেও বাস্তবে ক্ষমতাধরদের জন্য ভিন্ন আইন এবং দুর্বলদের জন্য কঠোর বিচার প্রক্রিয়া সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংবিধান-সংস্কার-সমস্যা-ও-প্রস্তাবনা
এরকমই গণতন্ত্র সংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও বিরোধী মতকে দমন, নির্বাচনী ব্যবস্থা অসাম্য এবং সংসদে একতরফা আলোচনার মত বিষয়গুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে আদর্শ ও বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকার এর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এই সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য হলেও সংবিধানটি সংস্কার করা প্রয়োজন।

মন্তব্যঃ সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা

সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সংবিধান টি সংস্কার করা কেন প্রয়োজন এবং কোন কোন সমস্যা থেকে সংবিধান টি সংস্কার করার বিষয়টি উত্থাপিত হচ্ছে এবং সংস্কার করার জন্য কোন প্রস্তাবনা গুলো গ্রহণযোগ্য। সংবিধান কোন নির্জীব দলিল নয় বরং এটি একটি রাষ্ট্রের প্রাণ, দর্শন এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের সংবিধান ইতিহাস, আন্দোলন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গঠিত হলেও বাস্তবায়নের পথ এখনো সুগম নয়। সময়ের পরিক্রমায় রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে।

কিন্তু সংবিধানের অনেক অংশ এখনো পরিবর্তনের স্পষ্ট দাবি রাখে। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধান টি সংস্কার শুধুই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয় বরং এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব যার জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, রাষ্ট্র পরিচালনার স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে যেসব বিষয় দীর্ঘদিন ধরে অস্পষ্ট বিতর্কিত বা বাস্তবতা বিবর্জিত সেগুলো যুক্তি বিচারের নতুন আলোচনায় আনা এর পাশাপাশি সংশোধন করাই হবে একটি আধুনিক ও মানবিক সংবিধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ।

সংবিধান টি সংস্কারের এই প্রয়াসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও বিচারবিভাগ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যেন সংবিধান কেবল রাষ্ট্রের শাসনপত্রই না হয় বরং জনগণের আস্থা অধিকারের প্রতীক হয়ে ওঠে। আইন সম্পর্কিত আরো নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত পরিদর্শন করুন।আমাদের কনটেন্ট গুলো পরিচিতদের সাথে নিয়মিত শেয়ার করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url