সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
সরকারীও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। প্রতিটি চাকরি প্রত্যাশী নাগরিক এর জানা জরুরি চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার আইন কানুন সম্পর্কে।প্রচলিত বেশ কিছু আইন দ্বারা চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম পরিচালিত হয়।
অনেক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন যারা বছরের পর বছর চাকরি করার
পরেও চাকরিতে স্থায়ী হতে পারছেন না। এক সময় তারা হাল ছেড়ে
দেন। এই সমস্ত নাগরিক তথা কর্মচারীর জন্য কি করনীয় রয়েছে সেটি জানতে হলে
আইন জানতে হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
- সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
- চাকরিতে স্থায়ীকরণ মানে কি
- চাকরিতে স্থায়ী করণ এর ধারাবলি
- সরকারী চাকরিতে স্থায়ীকরণ নিয়ম
- বেসরকারী চাকরি স্থায়ীকরণের নিয়ম
- চাকরি স্থায়ী করার যোগ্যতা
- দুই বছর পর চাকরি স্থায়ী
- প্রাইভেট চাকরির নিয়ম বাংলাদেশ
- অস্থায়ী ও স্থায়ী কর্মীর পার্থক্য
- মন্তব্যঃ সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম জানতে হলে কয়েকটি আইন এর সাথে
পরিচিত হতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সরকারি চাকরি আইন ২০১৮, শ্রম আইন ২০০৬
ইত্যাদি। যেসব বিধান, নিয়ম ও নীতিমালার মাধ্যমে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক বা
প্রবেশনকালীন কর্মীদের স্থায়ী পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে চাকরিতে স্থায়ীকরণ আইন
বলে। এই বিষয়টির সাথে যুক্ত রয়েছে চাকরি নিরাপত্তা, পদোন্নতি, বেতন কাঠামো এবং
পেনশন সুবিধার বিষয় গুলো। এবং এটি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইতিমধ্যে উল্লেখিত আইন সমূহ এবং বিভিন্ন প্রবিধিমালা ও কোর্টের রায় চাকরির
স্থায়ীকরণ বিষয় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সরকারি
চাকরিতে কোন ব্যক্তি নির্বিচ্ছন্নভাবে দুই বছর পূর্ণ করলে এবং পদটি স্থায়ী
কাঠামোতে থাকলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বাংলাদেশে এমন অনেক কর্মী রয়েছেন যারা বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী
পদে কাজ করেন কিন্তু সময় মত তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয় না, যার কারণে তারা
আইনগত ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ভুগেন।
চাকরিতে স্থায়ীকরণ মানে কি
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন কর্মীকে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক বা প্রবেশনকালীন
অবস্থান থেকে নিয়মিত স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে চাকরিতে স্থায়ীকরণ
বলে। চাকরিতে স্থায়ীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যেটি
কর্মচারীর চাকরির নিরাপত্তা, অবিচ্ছিন্ন কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
নিশ্চিত করে থাকে। যে সকল নাগরিক সরকারি বা বেসরকারি খাতে নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে
অবিচ্ছিন্নভাবে কর্মরত থাকেন তাদের চাকরি স্থায়ী করার অধিকার আইন দ্বারা
সুরক্ষিত রয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এর মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজের স্থায়িত্ব এবং চাকরি
সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে। এই আইনের ধারাসমূহ অনুসারে, কোন কর্মচারী
যদি নির্দিষ্ট সময় বা সাধারণত দুই বছর অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে কাজ
করেন এবং সেই পদটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মসংস্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে
তাহলে তাকে নিয়মিত করণ বা স্থায়ীকরণের সুযোগ দেওয়া হয়। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮
অনুসারে স্থায়ী নিয়োগের নীতিমালা এবং প্রবেশন কাল নির্ধারিত রয়েছে,
আরও পড়ুনঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ
যেটি চাকরির স্থায়িত্বের জন্য মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো ছাড়াও উচ্চ
আদালতের বিভিন্ন রায় কর্মীদের ন্যায় সঙ্গত ও বৈষম্যহীন স্থায়ী নিয়োগের
গুরুত্ব তুলে ধরে যেটি চাকরিতে স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়ার আইনি ভিত্তি আরো মজবুত
করে। এবার আমরা জেনে নেব আইন সমূহের কোন ধারাতে চাকরিতে স্থায়ীকরণ এর বিধানসমূহ
উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ও সরকারি চাকরি আইন অনুসারে সেটি আলোচনা
করা যাক।
চাকরিতে স্থায়ী করণ এর ধারাবলি
সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৭ ও ৯ ধারায় নিয়োগ ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পর্কিত
বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশন পিরিয়ড শেষে কর্মীকে নিয়মিত
করার বিধান রয়েছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশনকালীন কাজ শেষে কর্মীর
পারফরমেন্সের ভিত্তিতে স্থায়ীকরণ করা হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন সরাসরি
স্থায়ীকরণের বিধান দেয় না তবে এটি শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণ
নিশ্চিত করে। সুপ্রিম কোর্টের ২০১৬ সালের একটি রায়ে বলা হয়,
চাকরিতে স্থায়ীকরণ একটি মৌলিক কর্মী অধিকার যা শ্রম আইনের আলোকে সংরক্ষিত এবং
এটি বৈষম্যহীন স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে। কাজেই
স্থায়ীকরণের বিষয়টি বিভিন্ন প্রবিধিমালা, সরকারি আদেশ, সংবিধানমূলক রায় এবং
বিচারিক সিদ্ধান্ত থেকে উদ্ভূত। সরাসরি কোন আইনে এর ধারা বলি পাওয়া যায় না তবে
সরকারি চাকরি আইনে দুটি ধারা উল্লেখিত রয়েছে। কেউ যদি চাকরিতে স্থায়ীকরণের ধারা
পেতে চায় তাহলে তাকে বিভিন্ন প্রবিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।
সরকারী চাকরিতে স্থায়ীকরণ নিয়ম
সরকারি চাকরিতে স্থায়ীকরণ একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন কর্মী প্রবেশন
পর্যায় পেরিয়ে নিয়মিত স্থায়ী পদে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮
এর ধারা ৮ ও ৯ এ এমন বিধান দেখা যায়। এছাড়াও সরকারী চাকরিতে স্থায়ীকরণের
নিয়মাবলী মূলত সরকারি প্রবিধিবালা ও আদেশ দ্বারা নির্ধারিত। সরকারি চাকরি আইনের
ধারা ৮ এ বলা হয়েছে কোন স্থায়ী সরকারি কর্মচারী কে মেধা, সততা, দক্ষতা,
প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনাক্রমে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
কাজেই স্থায়ীকরণ কথাটি পরোক্ষ ভাবেই এই ধারায় পরিলক্ষিত হয়। এবং এ আইনের ৯ ধারায়
স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত শর্তাবলী ও কর্তৃপক্ষের কর্তব্য নির্ধারিত করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে স্থায়ীকরণ হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
সরকারি চাকরিতে স্থায়ীকরণ হওয়ার জন্য যে পদ্ধতি সমূহ অনুসরণ করতে হয় তা নিম্নে
উল্লেখ করা হলোঃ
- কর্মীকে সাধারণত প্রবেশন পিরিয়ডের নির্ধারিত সময় (সাধারণত ১ থেকে দুই বছর) সফলভাবে কাজ করতে হয়।
- কর্মীর কাজের মান, আচার ব্যবহার, দায়িত্ব পালনের দক্ষতা বিচার করে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
- যেই দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ে কাজ করা হচ্ছে সেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক স্থায়ীকরণের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়।
- সরকারি চাকরিতে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ অথবা যোগ্যতা অর্জনের পর স্থায়ী করা হয়।
বেসরকারী চাকরি স্থায়ীকরণের নিয়ম
বেসরকারি চাকরিতে স্থায়ীকরণ বলতে বোঝায় কোন কর্মী যখন একটি নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করার পর স্থায়ী কর্মী হিসেবে গণ্য
হন এবং প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী কাঠামো ও সুবিধার অধিকারী হন। বাংলাদেশ শ্রম আইন,
২০০৬ এর ধারা ৪ বিন্যাস অনুসারে, কোন শ্রমিক যদি নির্বিচ্ছন্নভাবে ছয় মাস কাজ
করে এবং কাজটি যদি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী প্রাকৃতিক কার্যক্রমের অংশ হয় তাহলে
সেই শ্রমিককে স্থায়ী হিসেবে গণ্য করা হবে অর্থাৎ তার চাকরিটি স্থায়ীকরণ এর
অন্তর্ভুক্ত হবে।
চাকরি নিরাপত্তা, বেতন ও ভাতার নিশ্চয়তা, আইনি সুরক্ষা, প্রতিষ্ঠান প্রমোশন ও
উন্নয়ন এবং অবসরের পর পেনশনে অংশগ্রহণের সুযোগের জন্য বেসরকারি চাকরিতে
স্থায়ীকরণ গুরুত্বপূর্ণ। কিছু শর্তাবলী রয়েছে যেগুলো পূরণের মাধ্যমে বেসরকারি
চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পন্ন হয়। নিচে এমন কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হলোঃ
- বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে কোন ব্যক্তি ৬ মাস থেকে ১ বছর নিরবিচ্ছিন্ন চাকরি করলে স্থায়ীকরণের জন্য বিবেচিত হন।
- প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী কর্মীর পারফরম্যান্স, আচরণ ও উপস্থিতির মূল্যায়নের উপর চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়।
- অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্থায়ীকরণ চিঠি বা চুক্তি প্রদান করা হয়। চুক্তিপত্রে স্থায়ীকরণ এর শর্তাবলী পূরণের মাধ্যমে বেসরকারি চাকরির স্থায়ীকরণ করা হয়।
- আইন অনুযায়ী কর্মী গ্র্যাচুইটি, ছুটি, বোনাস, ইপিএফ এবং ছাটাই এর ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি পেয়ে থাকেন।
এই নিয়মগুলোর মাধ্যমে বেসরকারি চাকরি স্থায়ীকরণ হয়। যেহেতু কেউ আইনের
ঊর্ধ্বে নয় সেহেতু একজন কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের মালিককে উল্লিখিত নিয়ম গুলো
অনুসরণ করতে হয়। আপনি যদি কোন বেসরকারি চাকরিতে যুক্ত থাকেন এবং যদি চান
আপনার চাকরি স্থায়িত্ব লাভ করুক তাহলে নিয়মগুলো মেনে চলুন এবং অপেক্ষা
করুন। এই নিয়মগুলো যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার চাকরি স্থায়িত্ব লাভ
করবে।
চাকরি স্থায়ী করার যোগ্যতা
এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা বছরের পর বছর অস্থায়ীভাবে চাকরি করে যাচ্ছেন
কিন্তু তার চাকরি স্থায়ীত্ব লাভ করছে না। তারা জানেও না আইনি কোন প্রতিকার আছে
কিনা। এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে আইনি গাইডলাইন রয়েছে। যদি আপনি কিছু শর্ত পূরণ
করেন তাহলে আপনার স্থায়ীকরণ যোগ্যতা ও প্রাপ্যতা রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন,
২০০৬ অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি ১০২ দিন বা তার বেশি দিন কাজ করেন তাহলে তাকে
অস্থায়ী বলা যাবে না। যদি এই সময় সীমা পার হয় তাহলে আপনি আপনার চাকরি
স্থায়ীকরণের জন্য দাবি করতে পারেন। আপনার কাজটি যদি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ
দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হয়,
তাহলে সেটিকে স্থায়ী কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। দৈনন্দিন কাজের অংশ বলতে বোঝানো
হচ্ছে অফিস সহকারি, একাউন্টস, কাস্টমার সার্ভিস ইত্যাদিকে। যদি আপনার কাজের
রেকর্ড ভালো হয় তাহলে প্রতিষ্ঠান চাইলেও আপনাকে স্থায়ী না করার কোন
যুক্তিসঙ্গত কারণ দিতে পারে না। তাই আপনার কাজে নিয়মিত হওয়াও চাকরি স্থায়ী
করার একটি যোগ্যতা। যদি লিখিত বা মৌখিকভাবে আপনাকে ছয় মাস বা এক বছরের পর
কাজের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী করা হবে এমন চুক্তি করে তাহলে
চুক্তির ভিত্তিতে আইনি দাবি তুলতে পারেন। প্রতিষ্ঠান মৌখিকভাবে যদি কথা দেয়
সেটিও সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণযোগ্যতা রাখে।
কোন প্রতিষ্ঠানে যদি আপনার কাজের জায়গা আগে থেকেই একটি স্থায়ী পথ হিসেবে
নির্ধারিত থাকে এবং সেটি খালি থাকে তাহলে সেখানে আপনি কাজ করছেন মানে আপনি সেই
পদের প্রার্থী। কাজেই এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান চাইলেও আপনাকে অস্থায়ী হিসেবে
গণ্য করতে পারেন না। উল্লিখিত শর্ত সমূহের মধ্যে তিনটির বেশি পূরণ করলে আপনি
চাকরি স্থায়ী হওয়ার দাবিদার। এরপরেও প্রতিষ্ঠান বাধা হয়ে দাঁড়ালে লিগ্যাল
নোটিশ, লেবারকোর্ট বা মানবাধিকার সংস্থার সহায়তা নিতে পারেন। ঘাবড়ে না গিয়ে
আইন সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যান।
দুই বছর পর চাকরি স্থায়ী
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে দুই বছর চাকরির পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী হওয়া
যায় কিনা। এর উত্তর এক কথায় যদি বলি তাহলে, না তবে নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতে
চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী হিসেবে বিবেচিত হয়। আইনের ভাষায় একে বলা হয়
deemed to be permanent যার অর্থ কর্মী কে স্থায়ী ধরে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ শ্রম
আইন, ২০০৬ এর ধারা ৪ এবং স্ট্যান্ডিং অর্ডারস অনুযায়ী, যদি কোন শ্রমিক তিন
মাসের বেশি সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং তাকে
টেম্পোরারি বদলি বা প্রশিক্ষণকালীন হিসেবে ধরে রাখা না হয়,
তবে সেই শ্রমিককে স্থায়ী কর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এখানে উল্লেখ করা
হয়েছে তিন থেকে ছয় মাস, ২ বছর নয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো ১ থেকে ২ বছর
টেম্পোরারি রেখে দেয় যার কারণে আমরা ২ বছর পর চাকরি স্থায়ী হবে ভেবে বসি।
প্রতিষ্ঠান গুলো এখানে আইন ভঙ্গ করে। এখন প্রশ্ন হলো দুই বছর পর চাকরি
স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী হয় কথাটি বললে ঠিক হবে কিনা। এর উত্তর হল যদি আপনি
দুই বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে একই প্রতিষ্ঠানে একই পদের বাস্তব দায়িত্ব পালন
করেন এবং কোন চুক্তি বা প্রবেশন ও না থাকে,
আরও পড়ুনঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
এবং প্রতিষ্ঠান আপনাকে পরিবর্তন করে না বা বাতিল করে না এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়
তাহলে আপনি আইন অনুসারে deemed to be permanent অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে
স্থায়ী বলে গণ্য হতে পারেন। এটাকে আমরা প্রচলিতভাবে স্বয়ংক্রিয় স্থায়ীকরণ
বলে থাকি। সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে
হলে আরো কিছু জেনে রাখা জরুরি। আপনার চাকরির স্থায়ীকরণ না হলে করণীয় নিচে
উল্লেখ করা হলোঃ
- প্রথমত প্রতিষ্ঠানের নিকট লিখিত আবেদন করুন।
- এরপর প্রয়োজন হলে আইনজীবীর সহায়তায় লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করুন।
- প্রয়োজনে লেবার কোর্টে মামলা করতে পারেন।
- এছাড়াও শ্রম অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
প্রাইভেট চাকরির নিয়ম বাংলাদেশ
বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরির নিয়ম সমূহ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ ও এর সংশোধনী
দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়াও শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড ও শ্রম ট্রাইবুনাল এবং
অন্যান্য সরকারী সংস্থা দ্বারা অধিকার সুরক্ষা করা হয়। এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
ছাড়াও বেসরকারী চাকরির নিয়মকানুন সম্পর্কে আরো কিছু জেনে থাকা জরুরি। নিম্নে
এমন বিষয়াবলি সম্পর্কে উল্লেখ করা হলোঃ
- নিয়োগ প্রক্রিয়াঃ প্রাইভেট খাতে চাকরি নেওয়ার সময় সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, সাক্ষাৎকার এবং প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান হয়। এবং নিয়োগপত্রে কর্মক্ষেত্রের শর্তাবলী, বেতন প্রবেশন এর কাল, কাজের সময় ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হয়। আইন অনুযায়ী প্রবেশন পিরিয়ড সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের হয়।
- চুক্তিভিত্তিক এবং স্থায়ী কর্মীঃ অনেক সময় প্রাইভেট সেক্টরে অনেক কর্মী প্রথমে চুক্তিভিত্তিক বা অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পান এবং কাজের প্রকৃতি ও প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের পরবর্তীতে স্থায়ী কর্মী করা হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী সাধারণত ছয় মাস কাজের পর কর্মীকে স্থায়ী করার নিয়ম রয়েছে।
- কাজের সময় ও ছুটিঃ প্রাইভেট সেক্টরে সাধারণত কাজের সময় ৮ ঘন্টা বা তার বেশি হতে পারে। তবে ৮ ঘন্টার বেশি হলে ওভার টাইম পেমেন্ট সাপেক্ষে বেশি হবে। সপ্তাহে ছয় দিন কর্ম দিবস হয়।
- বেতন ও অন্যান্য সুবিধাঃ প্রাইভেট খাতে বেতন শ্রম আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং সময়মতো প্রদান বাধ্যতামূলক। অবসর ভাতা, পেনশন বা অন্যান্য সুবিধা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে তবে মজুরি গোপন রাখা কিংবা দেরিতে প্রদান আইনত দণ্ডনীয়।
- শ্রমিক অধিকার ও শ্রম আদালতঃ যদি কোন কর্মী প্রাইভেট চাকরিতে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত হন তাহলে শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন এবং শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারের শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অস্থায়ী ও স্থায়ী কর্মীর পার্থক্য
যে কর্মী অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময় বা প্রকল্প ভিত্তিক কাজের জন্য
নিয়োগ প্রাপ্ত হন তাকে অস্থায়ী কর্মী বলে। অস্থায়ী কর্মীর নিয়োগ চুক্তি
সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়। কর্মীগণ প্রবেশন পিরিয়ডে থাকতে পারেন
অথবা সরাসরি অস্থায়ী পদে থাকেন এবং এই কর্মীরা স্থায়ী কর্মীর তুলনায় কম
সুরক্ষা ও সুবিধা পান। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ২৭ অনুযায়ী অস্থায়ী
কর্মীর কাজ প্রকল্প বা সময়সীমা ভিত্তিক হতে পারে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি
প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মী কাঠামোর অংশ,
এবং সর্বদা প্রয়োজনীয় তাকে স্থায়ী কর্মী বলা হয়। স্থায়ী কর্মী হিসেবে একজন
ব্যক্তি বেতন, ছুটি, অবসর, বোনাস এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেন এবং শ্রম আইন
অনুযায়ী অবিচ্ছিন্ন ছয় মাসের বেশি কাজের পর কর্মীকে স্থায়ী ঘোষণা করতে হয়
যদি কাজটি স্থায়ী প্রকৃতির হয়। স্থায়ী কর্মী হওয়ার মাধ্যমে একজন কর্মী
চাকরি নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তি পায়। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে
বেতন, ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা ও পেনশন ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত ভাবে পান। এবং অবৈধ
বরখাস্ত থেকে সুরক্ষা পান।
মন্তব্যঃ সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম
সরকারী ও বেসরকারী চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে
বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে এবং আইনি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সচেতন নাগরিক ও
কর্মী হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষেরই জানা উচিত তার চাকরি স্থায়ীকরণের নিয়ম
সম্পর্কে। উপরের আলোচনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সরকারি চাকরিতে স্থায়ীকরণ
হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন থাকে
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সাপেক্ষে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা পরিলক্ষিত হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে
গিয়ে। শ্রম আইন অনুযায়ী তিন থেকে ছয় মাস কাজ করার পর কিছু শর্ত
সাপেক্ষে বেসরকারি চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য কোন ব্যক্তি যোগ্যতা অর্জন করে
থাকে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে কাজ
করে নেয় যেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রতিটি বেসরকারি কর্মচারী নাগরিক
যদি এই ব্যাপারে সচেতন থাকেন তাহলে আইনি প্রতিকার পেতে পারেন।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url