বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলার মামলা পর্ব

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিচার কার্যক্রমের প্রাথমিক ধাপ হলো মামলা পর্ব। মামলা পর্ব ধাপেই নির্ধারিত হয় কৃত মামলা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা।
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-মামলার-মামলা-পর্ব
এবং বিবাদীর বিরুদ্ধে কৃত মামলাটি কিভাবে পরিচালিত হবে এবং বিচার প্রক্রিয়াটির ভিত্তি কেমন হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলার মামলা পর্ব

বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলার মামলা পর্ব

দেওয়ানী মামলা বলতে বোঝায় ওই সকল মামলা যেই মামলাগুলোতে চুক্তি এবং আর্থিক বিষযয়াবলি সম্পৃক্ত থাকবে। অর্থাৎ দেওয়ানি মামলাতে খুন, ধর্ষণ,রক্তপাত এই ধরনের ইত্যাদি মামলা জড়িত থাকবে না। বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব এমন একটি ধাপ যে ধাপ থেকে একটি বিচারই প্রক্রিয়ার ভিত্তি গড়ে ওঠে।
মামলা পর্ব নিয়ে নানা আইনবিদের নানা রকম ব্যাখা রয়েছে। বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্বে মোট আটটি উপধাপ পাওয়া যায়। সেই আটটি উপধাপ একটি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

মামলা দায়ের বা ফিলিং অব সুট

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা দায়ের পর্বে এর প্রথম উপপর্ব হলো পেইন্ট বা আরজি দাখিল। আরজি দাখিল করা হয় বাদীর পক্ষ থেকে। পেইন্ট বা আরজি দাখিল হলো এক ধরনের লিখিত অভিযোগ পত্র যার মাধ্যমে বাদী তার দাবির ভিত্তি ব্যাখ্যা করে।
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-মামলার-মামলা-পর্ব
দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৭ এর বিধি এক অনুযায়ী আরজি কিছু বিষয় উল্লেখ করতে হয়। এবং এই বিষয়গুলো উল্লেখ করা আবশ্যক। যেমন-
  • আরজি এবং মামলা যে আদালতে দাখিল করা হচ্ছে সে আদালতের নাম।
  • যিনি মামলা করছেন অর্থাৎ বাদীর নাম, পিতার নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
  • যার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে অর্থাৎ বিবাদী নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য পরিচয় যতদূর জানা যায় উল্লেখ করতে হবে।
  • বাদী যে কারণে মামলা করছেন তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
  • যে বিষয়ের উপর মামলা করা হচ্ছে সেই বিষয় বা ঘটনা কখন ও কোথায় ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
  • যেই আদালতে মামলাটি দায়ের করা হচ্ছে সেই আদালতের উক্ত মামলাটি বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে কিনা সেই বিবৃতি ও দিতে হবে।
  • মামলা করে বাদি কি ধরনের প্রতিকার চাচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
  • বাদী যখন আরজি দাখিল করবেন তখন আরজির সাথে বাদির হেফাজতে থাকা প্রাসঙ্গিক দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে। যদি কোন দলিলাদি বাদীর হেফাজতে না থাকে সেইটি উল্লেখ করতে হবে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালত আরজি প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারেন বা ফেরত দিতে পারেন। যদি দায়েরকৃত মামলাটি আদালতের এখতিয়ার ভুক্ত না হয় তাহলে আরজিটি ফেরত দিতে পারেন। আবার আদালত যদি মনে করেন প্রাসঙ্গিক দলিলাদি আরজির সাথে দাখিল করা হয়নি,

তাহলেও আরজিটি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। এছাড়াও আরজি তে দাবির বিষয়ে অস্পষ্টতা এবং আইনি ব্যত্যয় ঘটলে এবং মামলাটি ভুল আদালতে দাখিল করা হয়ে থাকলে অথবা অন্যান্য আইনি কারণে আদালত আরজিটি প্রত্যাখ্যান বা ফেরত দিতে পারেন।

ইস্যু প্রসেস বা সমনজারি

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্বে দ্বিতীয় উপধাপ হলো  সমনজারি। আদালতে আরজি দাখিল করা হলে এবং সেটি গ্রহণযোগ্য হলে আদালত বিবাদীকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। বিবাদীকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করতে সমন ইস্যু করা হয়।

সমন এর মাধ্যমে বিবাদী জানতে পারে যে তার বিরুদ্ধে আদালতে কোন মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে নির্দিষ্ট দিনে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এ সমন জারির কথা উল্লেখ হয়েছে। আদালতের একটি লিখিত নির্দেশনা,
যার মাধ্যমে বিবাদীকে আদালতে উপস্থিত এবং দলিলাদি বা প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপন এবং সাক্ষীকে আদালতে হাজির হতে বলা হয় তাকেই সমন বলে। সমন জারির ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন-
  • যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে অর্থাৎ বিবাদী কোথায় অবস্থান করছে।
  • সমনের প্রাপ্তি স্বীকার।
  • যখন মামলা দায়ের করা হবে তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন জারি করা।
  • সমন জারি করার সময় সমন জারির প্রতিটি ধাপ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।
সমান জারি করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-
  • যার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হচ্ছে তিনি যদি সরকারি কর্মচারী হন তাহলে সমন তার কর্মস্থলে পাঠাতে হবে।
  • বিবাদী যদি সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর সদস্য হন তবে সেই বাহিনীর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমন পাঠাতে হবে। 
  • যার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হচ্ছে তিনি যদি বিদেশে অবস্থান করেন তাহলে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসারে সমন পাঠানো হবে।

সমন পাঠানো বা সার্ভিস অফ সমন

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্বের তৃতীয় ধাপ হলো সমন পাঠানো। সমন পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে অর্থাৎ বিবাদীকে মামলার বিষয়ে অবহিত করা। এর পাশাপাশি বিবাদীকে নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হওয়া এবং বিবাদী কে জবাব দাখিলের সুযোগ প্রদান করাও সমন জারির উদ্দেশ্য। দেওয়ানী কার্যবিধি,১৯০৮ এ সমন পাঠানোর পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। পদ্ধতিটি হলো-
  • বিবাদি ঠিকানায় সরাসরি গিয়ে আদালতের জারি কারক সমন দিয়ে আসবেন।
  • ডাকযোগের মাধ্যমে সমন প্রেরণ করা যায়।
  • কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ও সমন প্রেরণ করা যায়।
  • বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যম যেমন ফ্যাক্স বা ইমেইল এর মাধ্যমে সমান প্রেরণ করা যায়। 

সমন ফেরত ও জবাব দাখিল

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্বের চতুর্থ উপধাপ হলো সমান ফেরত অথবা জবাব দাখিল। যদি সময় বিবাদীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব না হয় সেই সমন আদালতে ফেরত পাঠানো হয় এটি মূলত সমন ফেরত। কয়েকটি কারণে সমান ফেরতযোগ্য হয়। যেমন-
  • বিবাদী যদি নির্দিষ্ট ঠিকানায় না থাকে।
  • যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে অর্থাৎ বিবাদী যদি সমন গ্রহণ করতেন না যায়।
  • সমন যদি ভুল ঠিকানায় প্রেরণ করা হয়।
  • সমন যদি সঠিকভাবে জারি না করা হয়।
  • সমন জারির সময় সাক্ষীর স্বাক্ষর বা প্রমাণ সংগ্রহ না করা হয়।
জবাব দাখিল হল বিবাদীর পক্ষ থেকে আদালতে দাখিলকৃত এটি লিখিত প্রক্রিয়া যেটিতে বিবাদী বাদীর অভিযোগের প্রতি তার অবস্থান স্পষ্ট করবেন। বাদীর অভিযোগের প্রতি বিবাদীর প্রতিক্রিয়া প্রদান এবং বিবাদীর পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা গঠন করা হলো জবাব দাখিলের উদ্দেশ্য। জবাব দাখিল এর প্রক্রিয়া হলো-
  • বিবাদী যখন সমযন পাবেন, সেই সমন প্রাপ্তির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দাখিল করতে পারবেন।
  • বিবাদী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি লিখিত জবাব প্রস্তুত করবেন।
  • এবং সেই জবাবের সাথে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সংযুক্ত করবেন।
  • সেই প্রস্তুতকৃত জবাবটি আদালতে নির্দিষ্ট সময়ে দাখিল করবেন।

বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি বা এডিআর

বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলার মামলা পর্বের পঞ্চম উপধাপ হলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বলতে বোঝায় আদালতের বাহিরে এমন একটি বিচার ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা ব্যতি রেখেই কোন বিরোধ নিস্পত্তি করা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এর চারটি পদ্ধতি রয়েছে -
  • মধ্যস্থতা বা মেডিয়েশন।
  • সালিশ বা আরবিট্রেশন।
  • আলাপ আলোচনা বা নেগোসিয়েশন।
  • রেস্টরেটিভ জাস্টিস।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে যেকোনো মামলার দ্রুত সমাধান করা যায় এবং কম খরচ হয়। এবং যেকোনো মামলার গোপনীয়তা রক্ষা হয় এবং উভয় পক্ষের সুসম্পর্ক বজায় থাকে। বাংলাদেশের দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮, অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩, পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, সালিশ আইন ২০০১ এ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োগের উল্লেখ রয়েছে।

প্রথম শুনানি বা ফার্স্ট হেয়ারিং

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব তে ষষ্ঠ ধাপ হলো প্রথম শুনানি। বিবাদী আদালতে হাজির হলে এবং তার লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার পর প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
শুনানি পদ্ধতিতে আদালত মামলার মূল বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে এবং পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে তা নির্ধারণ করে। প্রথম শুনানির কার্যক্রম সমূহ হলো-
  • বাদী ও বিবাদীর পক্ষ থেকে আদালত অভিযোগ সমূহের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। এবং উক্ত স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি রেকর্ড করা হয়।
  • আদালত মূল বিতর্কের বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে।
  • প্রাথমিকভাবে আদালত বিরোধের বিষয়টি মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা চালাবেন।
  • উভয় পক্ষের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

মামলা পর্বের ফ্লেমিং ইস্যু

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব তে সপ্তম ধাপ হলো ট্রেনিং ইস্যু। ফ্লেমিং ইস্যু ধাপে আদালত মূল বিতর্কের বিষয়গুলো নির্ধারণ করে এবং এই নির্ধারিত বিষয়গুলি পরবর্তীতে শুনানিতে প্রমাণ  ও যুক্তির মাধ্যমে সমাধান করে। ইসু প্রধানত দুই প্রকার। আইনগত ইস্যু ও তথ্যগত ইস্যু।

আইনগত ইস্যুতে পক্ষ গুলোর মধ্যে আইনগত ব্যাখ্যা বা প্রয়োগ নিয়ে মতভেদ থাকে। অপরদিকে তথ্যগত ইস্যুতে পক্ষ গুলোর মধ্যে ঘটনার সত্যতা বা তথ্য নিয়ে মতভেদ থাকে। ইস্যু সাধারণত তিন ধাপে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। পক্ষগুলোর বক্তব্য পর্যালোচনা,
বাংলাদেশের-দেওয়ানী-মামলার-মামলা-পর্ব
পক্ষগুলোর মৌখিক জবানবন্দি এবং বিষয় নির্ধারণের মাধ্যমে ইস্যু নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ঈশ্বর নির্ধারণ করার ফলে মামলার পরিধি নির্ধারণ করা যায় এবং প্রমাণ উপস্থাপনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা যায়। এর পাশাপাশি বিচারিক কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ইস্যু নির্ধারণের মাধ্যমে। 

মামলা পর্বের ৩০ ধারা পদক্ষেপ

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্বের সর্বশেষ ধাপ হল ৩০ ধারা পদক্ষেপ। ৩০ ধারা পদক্ষেপ সাধারণত মামলার পক্ষ গনের মধ্যে তথ্য ও প্রমাণাদি আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে সহজতার করে। ৩০ ধারা পদক্ষেপ এর মূল বিষয়বস্তু হলো-
  • উভয়পক্ষ গণকে প্রশ্নাবলী ও জবাব প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া।
  • দলিল ও তথ্যাদি উপস্থাপন করা।
  • সাক্ষ্য গ্রহণ করা।
  • হলফনামা দাখিল করা।
৩০ ধারা পদক্ষেপ এর মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ের সত্য উদ্ঘাটন ও বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এছাড়াও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করণ সম্ভব হয় ৩০ ধারা পদক্ষেপ এর মাধ্যমে। 

মন্তব্যঃ বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব

বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব দেওয়ানি মামলার প্রক্রিয়া শুরুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। মামলা পর্ব যে কোন মামলার আইনগত গুরুত্ব এবং যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আদালতকে সাহায্য করে।

যদি মামলা পর্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় তাহলে যেকোনো মামলার দ্রুত এবং সঠিকভাবে এর ফলাফল পেতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের দেওয়ানি মামলার মামলা পর্ব শুধুমাত্র একটি প্রক্রিয়া নয় বরং যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url