আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
ইংরেজি শব্দ জুরিস্প্রুডেন্স এর বাংলা অনুবাদ আইনবিজ্ঞান। ল্যাটিন শব্দ জুরিস্প্রুডেন্সশিয়া থেকে জুরিস্প্রুডেন্স শব্দটি উৎপত্তি। জুরিস শব্দটির অর্থ আইন এবং প্রুডেনশিয়া শব্দের অর্থ জ্ঞান অতএব
উৎপত্তিগত অর্থে আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানকে জুরিস্প্রুডেন্স বা আইন বিজ্ঞান বলে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক আইন বিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্রঃ আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
- আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
- আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে
- আইন বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান পরিধি
- আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে
- আইন বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে
- সাধারণ ও বিশেষ আইনবিজ্ঞান
- সাধারণ ও বিশেষ আইন বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য
- আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য
- আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
- মন্তব্যঃ আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
সাধারণত আইনের মূল নীতিগুলির বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণী হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। বাংলা
ভাষায় ইংরেজি জুরিস্প্রুডেন্স শব্দটির বিভিন্ন প্রতিশব্দ লক্ষ্য করা যায়। যথাযথ
কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জুরি স্টুডেন্ট শব্দটির সকলের গ্রহণযোগ্য কোনো প্রতিশব্দ ঘোষণা
না করার কারণে এর বিভিন্ন প্রতিশব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানীগণ তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আইন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা
প্রদানে সচেষ্ট হয়েছেন। সাইমন আইন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, দেশের
দেওয়ানী আইনের প্রাথমিক মূল নীতিগুলির বিজ্ঞান হচ্ছে আইন বিজ্ঞান।
রোমান আইন শাস্ত্র বিদ আলপিয়নের মতে মানবিক ঐশ্বরিক বিষয়বস্তুর পর্যবেক্ষণ এবং
ন্যায় অন্যায়ের বিজ্ঞান হচ্ছে আইন বিজ্ঞান। ব্রিটিশ আইন বিজ্ঞানের জনক নামে
পরিচিত সার জন অস্টিন আইন বিজ্ঞান কে মনুষ্য কর্তৃক নির্ধারিত আইনের দর্শন হিসেবে
ব্যবহৃত করেছেন।
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আরো কিছু জেনে নেয়া
যাক। সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তনশীল ধারায় আইনের মৌলিক নীতি সমূহের কৌশলগত
বিন্যাসের তথ্য অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা পদ্ধতিকে আইন বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করা
যায়।
সমাজের বিবর্তিত চাহিদার সাথে আইনের সমন্বয় সাধন করার পদ্ধতিকে আইনের দর্শন বলা
যেতে পারে। বিজ্ঞানের অর্থ হচ্ছে বিশাল বা বিশেষ জ্ঞান। বস্তুনিষ্ঠভাবে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা আহরিত জ্ঞান কেই বিজ্ঞান বলা হয়।
এটা মানবিক তথা ঐশ্বরিক, প্রাকৃতিক, ধর্মভিত্তিক ও সামাজিক রীতি সিদ্ধ জ্ঞানও হতে
পারে। সামাজিক আইন শৃঙ্খলার সাথে যুক্ত যাবতীয় মানবিক জ্ঞান আইন বিজ্ঞানের
আলোচ্য বিষয়বস্তু বলে স্বীকৃত। আলপিয়ান এর মতে মানবিক ও ঐশ্বরিক বিষয়বস্তুর
পর্যবেক্ষণ, ন্যায় এবং অন্যায়ের জ্ঞানই আইনবিজ্ঞান।
আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে
সামন্ডের মতে আইন ও আইন ব্যবস্থার মূলনীতি সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও সাধারন অনুসন্ধান
করাকে আইন-বিজ্ঞান বলা যায়। আইনবিজ্ঞান এবং আইন বিষয়ক অন্যান্য গতানুগতিক
গ্রন্থের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশের প্রতিই তিনি ইঙ্গিত দান করেন। যেমন চুক্তি আইন
বা টর্ট আইন গ্রন্থ কতগুলি বিধিবিধান ও নীতির সমষ্টি মাত্র।
এত দু প্রকার বিধি-বিধান বা নীতিগুলো প্রামানিক উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং
বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য এগুলোকে বাস্তব ঘটনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
অন্যদিকে আইনের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কে আইন বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। কারণ আইন
বিজ্ঞান শুধুমাত্র বিধিবিধানের সমষ্টি বিশেষ নয় এবং আইন বিজ্ঞানে কোন প্রামাণিক
উৎস থেকে বিধি-বিধান সংকলন করা হয় না।
এমনকি আয় এরূপ কোন বিধি-বিধান কে বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ও প্রয়োগ করা
হয় না। আইনগত বিধি-বিধানের প্রকৃতি আইনগত ধারণা বলির অন্তর্নিহিত অর্থ ও আইন
ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করায় আইন বিজ্ঞানের কাজ। এভাবে
গতানুগতিক আইন গ্রন্থে কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য বিধিতে নির্দেশ করা
হয়।
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি জানতে হলে এও জানা উচিত যে কোন
বিধি-বিধান উদঘাটন করা আইনের প্রকৃতি নয় বরং প্রচলিত ও পূর্ব জ্ঞাত বিধিবিধান
সম্পর্কে আলোকপাত করায় আইন বিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য।
আইন বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান পরিধি
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে জানতে হলে এটি মনে রাখতে
হবে আইনবিজ্ঞান শুধু আইন জানতে সাহায্য করে না বরং আইন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা
করার গবেষণা করার এবং প্রয়োগ সম্পর্কে প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ প্রদানেও সাহায্য
করে। আইন বিজ্ঞানের পরিধি, বিষয়বস্তু ও কার্যক্ষেত্র বলতে বোঝায় বিভিন্ন দেশের
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনুসৃত নীতিসমূহ
এবং প্রচলিত আইন সমূহের কাঠামো গত বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োগ পদ্ধতি গুলির কার্যকারিতা
সমাবেশ। এটি এমন একটি বিধানকে অন্তর্ভুক্ত করে যা প্রতিটি দেশের আইন প্রণয়নের
মৌলিক নীতি নির্ধারণ করে এবং উক্ত মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে দেশে যাবতীয় আইন
প্রণীত হয়ে থাকে। এ কারণে আইন বিজ্ঞানকে প্রণয়ন মূলক বিজ্ঞান নামেও অভিহিত করা
হয়।
বিভিন্ন আইনবিদগণ দেশকাল ও পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আইন বিজ্ঞানের
পরিধি বিষয়বস্তু ও অধিক্ষেত্র নির্ধারণে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। আইন
বিজ্ঞানীদের এরূপ বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে বিশ্বের বিভিন্ন
রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন সমূহের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ,
কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য অসামঞ্জস্যতা ও অপূর্ণতা এবং এই আইনগুলো কি প্রকৃতির
নীতিবোধের উপর দন্ডায়মান এবং এদের প্রণয়ন ক্ষেত্র সংক্রান্ত অনুসৃত নীতিমালার
প্রভৃতির ভিত্তি কি এ সমস্ত বিষয় বলি আইন বিজ্ঞানের প্রধান বিষয়বস্তু।
আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে জানতে হলে আইন বিজ্ঞানের
দৃষ্টিকোণ সম্পর্কেও অবগত থাকা জরুরী। আইন বিজ্ঞানে ব্যাক্ষ্যামূলক ঐতিহাসিক
নৈতিক ইত্যাদি যে সকল গতানুগতিক শ্রেণীবিভাগ রয়েছে সেগুলো বর্তমানে গ্রহণযোগ্য
হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না।
পূর্বে সরাসরি কোন সংশ্লিষ্ট ঘটনা হতে আইন বিজ্ঞানের নীতি সমূহ গৃহীত হতো। যদিও
বর্তমানে ঘটনার বাস্তবতার আলোকে যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে সেটা থেকে আইন বিজ্ঞানের
নীতিসমূহ গ্রহণ করা হয়। সুতরাং বলা যায় আইন বিজ্ঞানের বর্তমান বিষয়াবলি
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা হয়।
আইন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে সকল নীতিগুলো পূর্বে গৃহীত হয়েছিল তা বর্তমানে
পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এগুলোর প্রয়োগ যোগ্যতা কতটুকু তার উপর যাচাই বাছাই
প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এভাবে বর্তমানে আইন বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ
আলোচ্য বিষয় হলো পূর্বে গৃহীত নীতিসমূহ এবং বর্তমানে গৃহীত নীতিসমূহের মধ্যে
গবেষণার মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করা।
আইন বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে জানার পর আইন বিজ্ঞানের
গুরুত্ব সম্পর্কে জানা উচিত। এমন ধারণা অনেকের মাঝে কাজ করে যে আইনবিজ্ঞান একটি
বস্তু নিরপেক্ষ ও তত্ত্বীয় বিষয় এবং এর ফলে আইন বিজ্ঞানের কোন ব্যবহারিক
উপযোগিতা থাকতে পারে না। সামন্ড এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করে মত প্রকাশ করেন যে
অন্যান্য জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের ন্যায় আইন বিজ্ঞানের ও স্বাভাবিক ও অন্তর্নিহিত অর্থ
ও উপযোগিতা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আইনের শ্রেণীবিভাগ ও প্রকারভেদ
একজন গণিত বিশারদ অংকের মাঝে যে রূপ তার কাঙ্ক্ষিত সমাধানটি খুঁজে বের করার
চেষ্টা করেন, তেমনি একজন অভিজ্ঞ আইনবিশারদও তার ব্যবহারিক চাহিদা মেটাতে
আইনবিজ্ঞান থেকে আইনগত যুক্তি ও স্বাভাবিক সময়ানুগ সমাধান অনুসন্ধান করে থাকেন।
যা সমাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আমরা জানি আইন শব্দটি অধিকারকে এর সাথে সম্পৃক্ত
করে আইন বিজ্ঞানের মাধ্যমে উক্ত অধিকার সমূহকে সুনিশ্চিত করা শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আইনগত, রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার একমাত্র উপায় হল
আইন বিজ্ঞানের উপর প্রভূত গবেষণা করা। আলোচনার মাধ্যমে যথার্থ আইনকে প্রতিষ্ঠিত
করা এবং অতঃপর এটাকে ব্যাখ্যা করাই হলো আইন বিজ্ঞানের প্রধান কাজ। এভাবে আইনে
যেকোনো জটিলতা দূরীভূত হয় ও আরো যৌক্তিক ও প্রয়োগযোগ্য আইন প্রণীত হয় আইন
বিজ্ঞানের মাধ্যমে।
সাধারণ ও বিশেষ আইনবিজ্ঞান
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আইনতত্ত্ববিদ দের মধ্যে
এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যে, আইনবিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে হবে কোন বিশেষ আইন
ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাতের জন্য নাকি বিভিন্ন আইন ব্যবস্থা সম্পর্কে
আলোকপাত করার জন্য। এরূপ প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ হলো অনেক সমস্যা বিশেষ আইন
ব্যবস্থা তেই লক্ষ্য করা যায়। যেমন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা সকল আইন ব্যবস্থা তে
বিদ্যমান। কিন্তু বাধ্যতামূলক পূর্ব দৃষ্টান্তের সমস্যা শুধুমাত্র কমন ল বা
অলিখিত আইন ব্যবস্থা তেই উদ্ভূত হতে পারে। এই প্রশ্নের আলোকে অস্টিন আইন
বিজ্ঞানের দুটি দিকের কথা উল্লেখ করেন। সাধারণ আইন বিজ্ঞান ও বিশেষ আইন বিজ্ঞান।
যে বিষয়ের বাজে উদ্দেশ্যে এর আইন সকল সমাজের সার্বজনীনভাবে গৃহীত সাধারণত আইন
বিজ্ঞান তা নিয়ে আলোচনা করে। সাধারণ আইন-বিজ্ঞান এমন মেয়ে অভিমত পোষণ করে যে,
সকল সমাজে প্রচলিত আইন হতে আইনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য এবং বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে
হবে। এ ব্যাপারে অস্টিনের উদ্ধৃতি হল,
সকল সমাজের সকল আইনের সূত্র ধারণা এবং তাদের মধ্যকার পার্থক্য সমূহ নিয়ে যে
বিজ্ঞান আলোচনা করে তাকেই আইন বিজ্ঞান বলা যেতে পারে। সুতরাং সকল সমাজের সমুদয়
আইনের বিবরণ প্রদান এবং তা হতে এ সকল আইনের ঐক্য খুঁজে বের করা এবং সে ঐক্যের
মধ্যে মানুষের সাধারণ স্বভাবের প্রতিবিম্ব আবিষ্কার করা সাধারণ আইন বিজ্ঞানের
কাজ। আইনের মৌলিক নীতিসমূহ ব্যাখ্যা করা এবং একাধিক আইনের মধ্যে যে সামঞ্জস্য
রয়েছে তা আলোচনা করা,
সাধারণ আইন বিজ্ঞানের কাজ। যেহেতু বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের আইন প্রচলিত রয়েছে
এবং দেশভেদে কোনো দেশের আইনগত পদ্ধতি এবং আদর্শ ভিন্ন প্রকৃতির হতে দেখা যায়
সেহেতু বিভিন্ন দেশের আইন সমূহকে পর্যালোচনার মাধ্যমে সাধারণ সূত্র আবিষ্কার করা
ও সাধারণ আইন বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান কাজ। কোন বিশেষ আইন বা সুনির্দিষ্ট কোন
আইনে আলোচনা কারি আইন বিজ্ঞান কে বিশেষ আইন বিজ্ঞান বলে। প্রত্যক্ষ পরিস্থিতি
সংশ্লিষ্ট আইনে আলোচনা করা বিশেষ আইন বিজ্ঞানের
কাজ। বিশেষ আইন বিজ্ঞানে একটি আইন ব্যবস্থা হতেই অধ্যায়নের বিষয়বস্তু গ্রহণ করা
হয়। সমাজে যে আইনের নাগরিকদের সুখ শান্তি ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের লক্ষ্যে প্রণয়ন
করা হয় সে আইনকে প্রত্যক্ষ বা যথার্থ আইন বলা যেতে পারে। এজন্য বিশেষ আইন
বিজ্ঞান কোন নির্দিষ্ট আইনগত পদ্ধতির প্রকৃত প্রতিবিম্ব হিসেবে অস্টিন মত প্রকাশ
করেন। সুতরাং বিশেষ আইন বিজ্ঞান তাকেই বলা যায় যা কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য
ব্যবহারিক আইন বিজ্ঞান হিসেবে প্রয়োগ হচ্ছে।
সাধারণ ও বিশেষ আইন বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আলোচনায় সাধারণ ও বিশেষ
আইনবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়নযোগ্য বিষয়। সাধারণ এবং বিশেষ আইন বিজ্ঞানের
পার্থক্য যে শুধু প্রয়োজনের দিক থেকেই লক্ষ্য করা যায় তা নয় বরং পরিধির দিক
থেকেও এদের পার্থক্য ব্যাপক লক্ষণীয়। যে ক্ষেত্রে সাধারণ আইনবিজ্ঞান একাধিক
বিশেষ আইন বিজ্ঞান হতে তথ্য সংগ্রহ করে সেক্ষেত্রে বিশেষ আইনবিজ্ঞান শুধু একটি
নির্দিষ্ট আইনগত পদ্ধতিরই বিস্তারিত আইনগত কাঠামো
আরও পড়ুনঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
প্রণয়ন করে। সুতরাং দেখা যায় সাধারণ আইন-বিজ্ঞান বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আইন
ব্যবস্থার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে। এতে সকল আইন ব্যবস্থার সাধারণ আইনগত
বিষয়বস্তু এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকসমূহের উপর আলোকপাত করা হয়।
অপরদিকে বিশেষ আইনবিজ্ঞানে কোন বিশেষ আইন ব্যবস্থার মূলনীতি সম্পর্কেই আলোচনা করা
হয়। অস্টিন কর্তৃক বিশেষ আইন-বিজ্ঞানকে একমাত্র বাস্তব আইন বিজ্ঞান হিসেবে
আখ্যায়িত করা হয়।
আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃত পরিধি সম্পর্কে জানতে হলে আইন ও আইন
বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য জানাটা খুবই জরুরী। নিচে আইন ও আইন বিজ্ঞানের মধ্যে
পার্থক্য উল্লেখ করা হলো-
- আইন হলো সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ নিয়মাবলী। পক্ষান্তরে, সাধারণ কথায় আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানকে আইন বিজ্ঞান বলা হয়।
- আইন নিজেই পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনার বিষয়বস্তু। পক্ষান্তরে, আইন সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা আইন বিজ্ঞানের কাজ।
- আইনের প্রয়োগ ক্ষেত্র শুধু কোন বিশেষ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সীমায় সীমিত থাকে। পক্ষান্তরে, আইন বিজ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষেত্র সমগ্র বিশ্বব্যাপী।
- আইনকে কোন বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে অবহিত করা হয় না। পক্ষান্তরে, আইনবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
- আইনের মূল লক্ষ্য হলো দুষ্টের দমন সৃষ্টির পালন তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পক্ষান্তরে, আইন বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো আইনের মূলনীতি পর্যালোচনা ও আইনে ব্যবহৃত শব্দমালার ব্যাখ্যা প্রদান করা।
- আইন হলো এমনই এক ধরনের বিধি যা কোন না কোন অধিকার ও বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, আইনবিজ্ঞান অনুরূপ অধিকার সৃষ্টি করে না।
- আইন উল্লিখিত ক্ষেত্রে প্রবেশ করে না। অর্থাৎ আইনের পরিধি এসব ক্ষেত্রে বিস্তারিত নয়। পক্ষান্তরে, আইন কাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার প্রতি আইন বিজ্ঞান বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
- যে কোন দেশের তথা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের প্রচলিত আইন কে আদালত কর্তৃক বলবৎ করা সম্ভব। পক্ষান্তরে, আইন বিজ্ঞানের সকল নীতিমালা গুলিকে আদালত কর্তৃক বলবৎ করা সম্ভব নয়।
- মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনের উৎপত্তি ঘটে। পক্ষান্তরে, আইন বিজ্ঞানের উৎপত্তি ঘটেছে আইন সম্পর্কীয় বিশেষ জ্ঞান হতে।
আইন বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি এর আলোচনায় আইনবিজ্ঞানকে সকল
আইনের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। যেকোন আইন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নিতে হলে আইন
বিজ্ঞান পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন। আইন বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে এই কেবল আইনের
মৌলিক সূত্রগুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত হওয়া যায়।
এ কারণে অধ্যাপক হলান্ড আইনবিজ্ঞানকে আইন শিক্ষার ব্যাকরণ হিসেবে অভিহিত
করেছেন। বিভিন্ন আইন বিচারক গ্রহণ কর্তৃক আইন বিজ্ঞানের স্থান কাল পাত্র ভেদে
প্রদত্ত বিভিন্ন সংজ্ঞা হতে এটা স্পষ্ট প্রতি ওমান হয় যে আইনটি যেরূপ হওয়া
উচিত ঠিক সেরূপ উদ্দেশ্য ও আদর্শের সমন্বয়ে গঠিত একটি নীতি শাস্ত্র। যার
অধ্যায়ন ব্যতিরেকে আইনশাস্ত্র সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান লাভ করা যায় না।
তাই আইনবিজ্ঞান। সুতরাং আইনবিজ্ঞান অধ্যয়ন ছাড়া কোন ব্যক্তি আইন বা আইন
বিষয়ে পারদর্শিত অর্জন করতে পারে না। আইন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ, আইনের ব্যাকরণ
শিক্ষার প্রয়োজনে, আইনের মৌলিক নীতিমালা সম্পর্কে জানার জন্য, প্রচলিত আইনের
ব্যাখ্যা দানকল্পে,
আইনের অবকাঠামো প্রণয়নে, আইন প্রণয়নে, বিচার কার্যে আইনের ভূমিকা নির্ধারণে,
বিচার বিভাগীয় নজীর সম্বন্ধে জানতে হলে, আইনের শ্রেনীবিভাগ করার ক্ষেত্রে,
সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকার ক্ষেত্রে সম্মুখ জ্ঞান লাভ করতে হলে আইন বিজ্ঞান
পাঠ করা একান্ত অপরিহার্য।
মন্তব্যঃ আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি
আইন সম্পর্কে যথাবিহিত জ্ঞান অর্জনের জন্য আইন বিজ্ঞান পাঠের অপরিসীম গুরুত্ব
রয়েছে। আইনবিজ্ঞান কি ও আইন বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি এবং আইন শিক্ষার
ক্ষেত্রে প্রাথমিক চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে আইনবিজ্ঞান। এক অর্থে আইন ও আইন
বিজ্ঞান পরস্পর পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট এবং
এদের একটিকে অপরটি থেকে আলাদাভাবে দেখা সম্ভব নয়। আইন বলতে প্রধানত কোন কাজ
করার বা না করার অধিকার গত নীতিমালা কে বুঝিয়ে থাকে। অপর পক্ষে আইন বিজ্ঞান
বলতে সে কাজের অধিকারগত নীতিমালা সম্পর্কিত জ্ঞানার্জনকে বোঝায়। বিধায় আইন
শিক্ষার ক্ষেত্রে উভয়ের অস্তিত্ব অনস্বীকার্য।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url