জামিনের আইন বাংলাদেশ
জামিনের আইন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী কারণ বাংলাদেশের অনেক মানুষই
কারণে-বিনা কারণে আইনের মায়াজালে আটকে পড়ে আছেন। অনেকে অপরাধ করে শাস্তি ভোগ
করছেন,
আবার অনেকে বিনা অপরাধে বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত রয়েছেন। এই সকল ঝামেলা থেকে
বাঁচার জন্য বাংলাদেশের আইন কিভাবে কাজ করে, জামিনের ধরন, আবেদন পদ্ধতি ও কোর্টের
এখতিয়ার সম্পর্কে জানা জরুরী।
পেজ সূচিপত্রঃ জামিনের আইন বাংলাদেশ
জামিনের আইন বাংলাদেশ
জামিনের আইন বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যে দুটি আইনের কথা বলতে হয়
সেটি হল বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এবং ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ সম্পর্কে।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে জামিন একটি গুরুত্বপূর্ণ
আইনগত অধিকার যেটি অভিযুক্ত ব্যক্তি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই মুক্ত থাকার
সুযোগ পেতে পারেন। বিশেষ করে যারা আটক বা গ্রেফতার হয়েছে সেই সকল মানুষের জন্য
জামিনের আবেদন জীবন ও জীবিকার দিক থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী জামিন কখন দেওয়া যাবে কাদের ক্ষেত্রে তা বাতিল
হতে পারে এবং কাদেরকে দেওয়া যাবে এসব বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। এছাড়াও
পুলিশী জামিন, ম্যাজিস্ট্রেট জামিন ও হাইকোর্ট জামিন এই তিন স্তরের জামিন দেওয়ার
নিয়ম আছে। এই জামিনসমূহের প্রয়োগ অপরাধ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। দেশ
ডিজিটাল হওয়ার সাথে সাথে অনলাইন জামিন আবেদন জামিন সম্পর্কিত হাইকোর্টের রায়
এবং আইনজীবীর পরামর্শ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জামিনের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
যে আইনের মাধ্যমে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারাধীন অবস্থায় জেল হেফাজতে না থেকে
নির্দিষ্ট শর্তে অস্থায়ী মুক্তি লাভ করে তাকে জামিন বা Bail বলে। জামিনের
মাধ্যমে একজন আসামি প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি বিচার কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে
আদালতে উপস্থিত থাকবেন। জামিন একটি আইনি আশ্বাস। বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধির
ধারা ৪৯৬ থেকে ৫০১ পর্যন্ত জামিন সংক্রান্ত বিধান প্রদান করা হয়েছে। সরাসরি
জামিনের কোন আইনি সংজ্ঞা নেই তবে বিচারিক পর্যায়ে এটি এমন একটি শর্ত যুক্ত
মুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়,
আরও পড়ুনঃ সংবিধান সংস্কার - সমস্যা ও প্রস্তাবনা
যেটি অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার বা আটক থাকা অবস্থায় প্রদান করা হয়। এবং শর্ত
দেওয়া হয় তিনি আদালতের ডাকে সাড়া দেবেন। এবার জেনে নেওয়া যাক জামিনের
প্রকারভেদ সম্পর্কে। বাংলাদেশে যে পাঁচ ধরনের জামিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সে
সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- অন্তর্বর্তীকালীন জামিনঃ যখন আসামি চূড়ান্ত জামিন শুনানির আগেই সাময়িকভাবে মুক্তির আবেদন করেন তখন আদালত কিছুদিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
- নিয়মিত জামিনঃ যখন আসামিকে নিয়মমাফিক জামিন দেওয়া হয় এবং বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুক্ত থাকেন তাকে নিয়মিত জামিন বলে।
- পূর্ব জামিনঃ যখন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং তিনি আগে থেকে জামিনের আবেদন করেন তাকে পূর্ব জামিন বলে। পূর্ব জামিনের বিষয়টি বাংলাদেশের আইনে স্পষ্টভাবে নেই কিন্তু হাইকোর্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ধরনের জামিন দিয়ে থাকেন।
- জরুরি জামিনঃ যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি অসুস্থ, বৃদ্ধ বা গর্ভবতী নারী হন এমন মানবিক কারণ পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে তাৎক্ষণিক যে জামিন প্রদান করা হয় তাকে জরুরি জামিন বলে।
- পুলিশী জামিনঃ আইন দ্বারা নির্ধারিত কিছু জামিনযোগ্য অপরাধে পুলিশ নিজেই আদালতের আদেশ ছাড়াই থানায় জামিন দিতে পারেন, একে পুলিশই জামিন বলে।
জামিনের আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে একটি নির্ধারিত আইনি পদ্ধতি যেটির মাধ্যমে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি
আদালতের কাছে নিজেকে অস্থায়ী মুক্তির জন্য আবেদন করতে পারেন তাকে জামিনে আবেদন
প্রক্রিয়া বা Bail Application Process বলে। জামিনের আবেদন প্রক্রিয়া ফৌজদারী
কার্যবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। জামিনযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য অপরাধ সমূহের উভয়
ক্ষেত্রেই শর্ত ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রয়োগ যোগ্য হয়। জামিনের আবেদন সাধারণত
জেলা আদালত, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সেশন জজ বা হাইকোর্ট বিভাগে করতে হয়।
জামিনের জন্য আবেদন কিভাবে করতে হয় এ সম্পর্কে কয়েকটি ধাপে বিন্যস্ত করে আলোচনা
করা যেতে পারে । আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন প্রস্তুত।
- আদালতে দাখিল।
- প্রসিকিউশনের বক্তব্য।
- আদালতের শুনানি ও আদেশ।
- জামিনের শর্ত।
অথবা মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে পারে, তবে তারা জামিনে বিরোধীতা করে
থাকেন। শুনানি শেষে আদালতের নিকট প্রতীয়মান বিষয়ের উপর ভিত্তি করে, আদালত জামিন
মঞ্জুর করতে পারেন অথবা জামিন শর্ত যুক্ত মঞ্জুর করতে পারেন অথবা জামিন আবেদন
খারিজ করতে পারেন। জামিনের সময় আদালত, নির্দিষ্ট পরিমাণ বন্ড বা মুচলেকা, আদালতে
নিয়মিত হাজিরা এবং বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার মতো কিছু শর্ত সমূহ আরোপ করে থাকেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৬ থেকে ৫০১ ধারা পর্যন্ত জামিনের বিষয়াবলী উল্লিখিত হয়েছে।
জামিন কোর্টের এখতিয়ার
কোন আদালত কোন পরিস্থিতিতে জামিন মঞ্জুর করতে পারেন তার আইনি ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা
অনুসারে, এটিকে জামিন কোর্টের এখতিয়ার বা Court's Power to Grant Bill বলা হয়।
বাংলাদেশের ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪৯৬ থেকে ৫০১ ধারা পর্যন্ত এটির ব্যাখা
রয়েছে। ৪৯৬ এবং ৪৯৭ অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দিয়ে থাকেন। ধারা ৪৯৬
অনুসারে জামিনযোগ্য অপরাধে পুলিশ বা আদালত জামিন দিতে বাধ্য। ধারা ৪৯৭ অনুসারে
অজামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিতে পারেন কিছু শর্তসাপেক্ষে।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে দেখতে হবে অভিযোগ গুরুতর কিনা। এবং আসামি নারী, শিশু,
বৃদ্ধ বা অসুস্থ কিনা এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন ঝুঁকিপূর্ণ কিনা। ধারা
৪৯৭ অনুসারে অভিযুক্ত ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যদি জামিন না পায় তাহলে সেশন
জজ আদালতে আবেদন করা যায়। বিচারাধীন মামলার গুরুত্ব ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে
অজামিনযোগ্য অপরাধে জামিন দিতে পারেন সেশন কোর্ট। ধারা ৪৯৮ অনুসারে হাইকোর্ট বা
সেশন কোর্ট যে কোন সময় যেকোনো আসামিকে জামিন দিতে পারেন। এমনকি যদি মামলাটি
গ্রেফতারের আগেই হয়।
আরও পড়ুনঃ গোপালগঞ্জ সংঘর্ষের আইনি বিশ্লেষণ
ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৯৮ অনুযায়ী জামিন স্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন হয়ে
থাকে। আপিল বিভাগে সরাসরি জামিন আবেদন হয় না। তবে হাইকোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে
জামিন চাওয়ার সুযোগ আপিল বিভাগে থাকে। আপিল বিভাগের Leave to Appeal এর মাধ্যমে
জামিন বিবেচনা করা হয়। Leave to Appeal বলতে বোঝায় আপিল করার জন্য অনুমতি
চাওয়াকে। যদি আইন সরাসরি আপিলের অনুমতি না দেয় তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানের
অনুচ্ছেদ ১০৩(২) অনুযায়ী Leave to Appeal নিতে হয়।
জামিনে অপরাধের গুরুত্ব সম্পর্কে
জামিন মঞ্জুর এর ক্ষেত্রে অপরাধের ধরণ ও গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত ও সেই অপরাধ কতটা গুরুতর এসব বিষয়ের
উপর আদালত জামিন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় প্রথমেই বিচার করেন। অপরাধের
গুরুত্ব বিচারের কারণ হলো জামিন আদালতের বৈচিত্র্যময় এখতিয়ার, এটি কোনো অধিকার
নয় বরং আদালতের অনুকম্পা বা Judicial Discretion। এ কারণে যদি অপরাধ অত্যন্ত
ভয়াবহ ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয় তাহলে আদালত জামিন না দেওয়ার পক্ষেই থাকতে
পারে।
এমন কিছু অপরাধ সম্পর্কে আমাদের জেনে থাকা জরুরি যেগুলো সংঘটিত হলে অভিযুক্ত
ব্যক্তির জামিন কঠিন হয়ে যায়। নিচে এমন কিছু অপরাধ সম্পর্কে উল্লেখ করা
হলোঃ
- খুনঃ বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩০২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
- ধর্ষণঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ও ২০২৫ এর সংশোধনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
- অ্যাসিড নিক্ষেপঃ অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হয়।
- সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রদ্রহিতাঃ বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ১২১ ও ১২৪ক অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
- ডাকাতি ও দস্যুতাঃ বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৯৫ ও ৩৯৮ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জামিনের শর্ত ও বিধি
আদালতের একটি বৈধ অনুকম্পা হলো জামিন যেটি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িক মুক্তি
দিয়ে বিচার কাজে হাজির থাকতে সুযোগ দেয়। তবে এই জামিন দেওয়ার সময় কোন শর্ত
ছাড়াই দেওয়া হয় না বরং কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করে জামিন দেওয়া হয়। এই
শর্তসমূহ না মানলে জামিন বাতিল হয়ে যায়। চলুন জেনে নেই জামিনের শর্ত সমূহ। নিচে
জামিনের সাধারণ শর্ত সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ
- আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়।
- তদন্তে সহযোগিতা করতে হয়।
- কোথাও পালিয়ে যাওয়া যাবে না।
- কোনভাবেই সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না।
- যেকোনো পরিস্থিতিতেই আদালতের লিখিত অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করা যাবে না।
- নির্ধারিত জামিন বন্ড বা অর্থ মূল্য প্রদান করতে হবে।
- পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
- ধারা ৪৯৬ অনুসারে জামিনযোগ্য অপরাধে তাৎক্ষণিক জামিন পাওয়ার অধিকার।
- ধারা ৪৯৭ অনুসারে অজামিনযোগ্য অপরাধে জামিনের আবেদন ও কিভাবে বিবেচিত হবে সেটি উল্লেখ রয়েছে।
- ধারা ৪৯৮ এ রয়েছে উচ্চ আদালতের কাছে জামিন আবেদন সম্পর্কে।
- এবং ধারা ৪৯৯ তে জামিনদারের দায়িত্ব ও জামিন বাতিলের নিয়ম রয়েছে।
পুলিশী জামিন বনাম কোর্ট
মামলার ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশী
জামিন অথবা আদালতের জামিন পেতে পারেন। পুলিশ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজেই যে জামিন
দিয়ে থাকেন তাকে পুলিশী জামিন বলে। পুলিশি জামিন শুধুমাত্র জামিনযোগ্য অপরাধের
ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়। পুলিশী জামিন কার্যকর হয় ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪৯৬ ও
৪৯৭ এর আলোকে। প্রাথমিক গ্রেফতারের পর থানাতেই জামিন দেওয়া হয় এবং আদালতে না
গিয়েই মুক্তি সম্ভব হয় এই পদ্ধতিতে। এর পাশাপাশি তদন্ত চলাকালীন সহযোগিতা করতে
হয়।
আরও পড়ুনঃ নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব
যখন কোন ব্যক্তি গ্রেফতার হন এবং পুলিশ জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায় অথবা মামলাটি
অজামিনযোগ্য অপরাধের হয় তখন তাকে জামিন পেতে হয় আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে, একে
আদালতের জামিন বলে। এই ক্ষেত্রে আবেদন করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সেশন কোর্টে।
আইনজীবীর সহায়তায় পিটিশন ফাইল করতে হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনও
বিবেচিত হয়। এই ক্ষেত্রে বিচারকের এখতিয়ার অনুযায়ী জামিন দেওয়া হয় অথবা
নামঞ্জুর হয়। জামিনের আইন বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার জন্য এই তথ্য জানা
জরুরি।
জামিন আইন সংক্রান্ত রায়
সত্যবাবু বনাম বাংলাদেশ সরকার, ৭৪ ডিএলআর (হাইকোর্ট ডিভিশন) ২০২২ মামলার বিচারপতি
ছিলেন মোঃ মোস্তোফা জামান ইসলাম ও মোঃ আতাউর রহমান খান। এই মামলায় আবেদনকারী
ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হন এবং তিনি দীর্ঘ সময় বিচারাধীন
থাকার ফলে জামিনের আবেদন করেন। মামলাটি সংশ্লিষ্ট আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য
দেরি হওয়ায় তিনি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তাকে
জামিন প্রদান করেন কারণ তিনি বিচারাধীন মামলায় অনেকদিন জেল খেটেছেন।
তদন্ত শেষ হলেও চার্জ গঠন হয়নি এবং রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে থাকাকালীন পালানোর কোন সম্ভাবনা ছিল না এবং জামিনের
শর্তে বিচার কাজে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ছিল। রায়টি পর্যবেক্ষণ করলে এই বিষয়টি
বোঝা যায় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত দোষী প্রমাণিত না হন ততক্ষণ তাকে
নির্দোষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এটাই ফৌজদারী বিচারের মূলনীতি। এবং জামিনযোগ্য ও
অজামিনযোগ্য উভয় ক্ষেত্রে আদালতের বিচারিক স্বাধীনতা রয়েছে। মামলাটির থেকে এসব
বিষয় শিক্ষণীয়।
জামিন ও মানবাধিকার সুরক্ষা
জামিন একটি মৌলিক মানব অধিকারের অংশ হিসেবে বিবেচিত। ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায়
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সমান আইনি সুরক্ষা পাওয়ার
অধিকার রাখেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক নাগরিক আইনের
আশ্রয় ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। এবং ৩৩(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রেফতারকৃত
ব্যক্তি ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করা পর্যন্ত ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করা
যাবে না। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ
দোষী প্রমাণিত হতে পারে না। এই অনুচ্ছেদ সমূহ জামিনের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
এবং একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি যেন অন্যায়ভাবে আটক না থাকেন তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি সমূহের একজন স্বাক্ষরকারী। International Covenant
on Civil and Political Rights এর ৯(৩) অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে বিচারাধীন ব্যক্তি
কে অনিবার্যভাবে জেলে রাখা যাবে না। কেননা কেও অপরাধ করেছে কিনা সেটা আদালত
সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই তাকে দীর্ঘ সময় হাজতে রাখা অন্যায় ও অমানবিক। জামিনের
মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার আত্মমর্যাদা, কাজের অধিকার ও পারিবারিক দায়িত্ব বজায়
রাখতে পারেন।
মন্তব্যঃ জামিনের আইন বাংলাদেশ
জামিনের আইন বাংলাদেশ নিয়ে লেখা আজকের অনুচ্ছেদে বিশদ্ভাবে আলোচনা করা হয়েছে
ফৌজদারী কার্যবিধি , ১৮৯৮ এর বেশ কিছু ধারা নিয়ে। ধারা সমূহ সম্পর্কিত রয়েছে
জামিন এর সাথে। জামিন শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয় বরং এটি একজন অভিযুক্ত
ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যা তাকে বিচারাধীন অবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় রাখার
সুযোগ দেয়। একদিকে যেমন নির্দোষ ব্যক্তিকে রক্ষা করা জরুরি অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট
অপরাধের গুরুত্ব, সাক্ষী প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা,
মামলা তদন্ত প্রক্রিয়া হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আদালতকে
ব্যালেন্সড সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জামিনের সঠিক প্রয়োগ কেবল বিচারপ্রার্থী
নাগরিকের অধিকার রক্ষা করেনা বরং এটি আইন ও মানবিক মূল্যবোধের মধ্যকার ভারসাম্য
বজায় রাখে। যদি আপনার পরিচিত কেও এমন কোন পরিস্থিতির শিকার হন এবং জামিন
সম্পর্কে জানাতে চান তাহলে তার নিকটাত্মীয়দের কাছে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং
আইনি বিশ্লেষণ ধর্মী এমন অনুচ্ছেদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url