নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব

বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান একটি বিষয় হল পাথর দিয়ে নৃশংস ভাবে মানুষ হত্যার বিষয়টি। মানুষ হত্যা ধর্মীয়ভাবে অথবা রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ঘৃণিত কাজ। এই ধরনের অপরাধ শুধু মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনে না বরং রাষ্ট্রের কাঠামো এবং আইনগত কাঠামো কেও ধাক্কা দেয়।
নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব
এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় রাষ্ট্রের আইনগত ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষ কতটা অজ্ঞ। যদি আইনগত জ্ঞান থাকতো তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস করত না। এই নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব সম্পর্কে জেনে নেই। এই অপরাধের শাস্তি ও ফলাফল সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে নেই।

পেজ সূচিপত্রঃ নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব

নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব

পাথর দিয়ে হত্যা অমানবিক কার্যক্রম যেটি শুধু বিবেককেই নাড়া দেয় না বরং এটি সমাজের ন্যায়বিচার এর কাঠামোর প্রতিও আঘাত হানে। সাম্প্রতি এমনই একটা ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে যা আমাদের আইনি ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও মানবিক দায়িত্ববোধের প্রতি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা এটি বুঝতে পেরেছি যে একটি দেশের আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা কতটা স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন এবং আইন শুধু তৈরির মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না থেকে সেটি প্রয়োগে নজর দেয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও কাঠাম আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

আজকের আর্টিকেলে আমরা জেনে নেব নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব কি হতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে আমরা কোন অবস্থান নিব এবং আইনগত প্রতিকার কি পাবো। বাংলাদেশে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় নরহত্যা ও খুনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যেটি দন্ডবিধির ২৯৯ ও ৩০০ ধারায় পরিলক্ষিত হয়। এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য প্রমাণ এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে বর্তমানে আদালত ভিডিও ফুটেজ মাধ্যমটি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন। কাজেই যে ঘটনাটি ঘটেছে এই ঘটনার ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজের প্রমাণটিও সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

ইচ্ছাকৃতভাবে পাথর দিয়ে হত্যা

যে ঘটনাটি দেখা গেছে সেটিতে পরিলক্ষিত হয় যে যে মানুষটিকে পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেটির মধ্যে দন্ডবিধির ধারা ৩০০ তে বর্ণিত খুনের চারটি উপাদান বিদ্যমান। মানুষটিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুরুতর আঘাত প্রদানের মাধ্যমে সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ দন্ডবিধির ৩০০ ধারা অনুসারে সেই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও সাক্ষ্য প্রমাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা আদালতের বিষয়। সকল সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের পর যদি আদালতের নিকট এটি প্রতীয়মান হয় যে,
দণ্ডবিধির ৩০০ ধারা অনুসারে উক্ত কাজটি সম্পাদিত হয়েছে তাহলে অপরাধীকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে শাস্তি প্রদান করা হবে। দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি খুন করে তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এছাড়াও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় সাধারণ উদ্দেশ্যের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যদি একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে মিশে একই উদ্দেশ্যে একই অপরাধ সংগঠিত করে তাহলে তারা প্রত্যেকে দোষী। পাথর দিয়ে হত্যার ঘটনায় দেখেছি প্রত্যেকে ৩৪ ধারার অধীনে অভিযুক্ত।

খুন ও দন্ডনীয় নরহত্যা পৃথকীকরণ

বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুন ও দণ্ডনীয় নরহত্যা একই বিষয়ে মনে হলেও আইনগতভাবে এদের পার্থক্য রয়েছে। সকল খুনই দণ্ডনীয় নরহত্যা কিন্তু সকল দণ্ডনীয় নরহত্যা খুন নয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২৯৯ তে দণ্ডনীয় নরহত্যা এবং ধারা ৩০০ তে খুন এর বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি পাথর নিক্ষেপ করে অর্থাৎ গুরুতর আঘাত করে কাউকে হত্যা করে যদিও সে জানতো যে এর ফলে ব্যক্তিটির মৃত্যু হবে তাহলে প্রাথমিকভাবে এটিকে দণ্ডনীয় নরহত্যা হিসেবে পরিগণিত করা হয়। যতক্ষণ না খুনের চারটি উপাদান এটিতে বিদ্যমান প্রতীয়মান হয়।

যখনই খুনের চারটি উপাদান দণ্ডনীয় নরহত্যার মধ্যে পরিলক্ষিত হবে তখন এটিকে আর দণ্ডনীয় নরহত্যা না বলে খুন বলে বিবেচিত করা হয়। সেই চারটি উপাদান হলো ইচ্ছা, গুরুতর আঘাত, সজ্ঞান, হত্যা করা। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে কোন মানুষকে হত্যা করলে প্রাথমিকভাবে সেটি দণ্ডনীয় নরহত্যা এবং পরবর্তীতে খুনের চারটি উপাদান এর মধ্যে প্রতীয়মান হলে সেটিকে খুন বলে গণ্য করা হবে। কাজেই পাথর দিয়ে হত্যা করার বিষয়টি যদি আদালতে প্রতীয়মান হয় যে এটি খুন তাহলে ৩০২ ধারায় অপরাধী শাস্তি পাবে। অন্যথায় ৩০৪ ধারায় শাস্তি পাবে।

দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা প্রয়োগ

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩০২ ধারা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা। যদি কোন ব্যক্তি খুন করে তাহলে এই ধারার মাধ্যমে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। পাথর দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে হত্যা করলে সেটি যদি ৩০০ ধারা অনুসারে খুন প্রমাণিত হয় তাহলে অপরাধী ৩০২ ধারা অনুসারে শাস্তি ভোগ করবে। যদি কোন ব্যক্তি খুন করে তাহলে ৩০২ ধারা অনুসারে সে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এই ঘটনার সাপেক্ষে উপাদান সমূহ হলো খুন প্রমাণিত হতে হবে। এবং ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড টি ঘটাতে হবে।
নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব
এরপরও বিষয়টি আদালতে প্রমাণের উপর নির্ভর করে। সাক্ষ্য প্রমাণে যদি খুন প্রতীয়মান হয় তাহলে অবশ্যই ৩০২ ধারায় শাস্তি পাবে। যদি দলবদ্ধ ভাবে হয় তাহলে এক্ষেত্রে ধারা ৩৪ প্রয়োগ যোগ্য। মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে সম্পাদিত ঘটনায় পাথর দিয়ে বিষয়টি যদি সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় যে এটি ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে এবং এটি যদি ৩৪ ধারার অধীন প্রতীয়মান হয় তাহলে অভিযুক্ত সকলকেই ৩০২ ধারার অধীনে এনে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রয়োগ করা যেতে পারে। আদালতের ইকুইটি এন্ড ম্যানার এর ওপর নির্ভর করছে এই বিষয়টি।

প্রকাশ্যে সম্পাদিত অপরাধের বিধান

যখন কোন অপরাধ জনসম্মুখে সম্পাদিত হচ্ছে তখন সেটি শুধুমাত্র ফৌজদারি অপরাধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বরং এটি সমাজের স্থিতিশীলতা ও সমাজের নিরাপত্তা কেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। যখন হত্যাকান্ড টি জনসম্মুখে সম্পাদিত হচ্ছে তখন দন্ডবিধির পাশাপাশি অপরাধ সংগঠনের জনগণের প্রকৃতিও বিচার প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কোন অপরাধ যখন জনসম্মুখে সম্পাদিত হয় তখন সেটি জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায় এবং সমাজে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও এর পাশাপাশি প্রমাণ সংগ্রহ যদিও সহজ হয় কিন্তু বিচারিক দায়িত্ব কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর বেশ কিছু ধারা প্রকাশ্যে সম্পাদিত অপরাধের বিধান হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। দণ্ডবিধির ধারা ৩৪ এবং ধারা ৩০২ প্রকাশ্যে হত্যার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। যা ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এর সাথে আরও একটি ধারা সম্পর্কিত সেটি হলো ধারা ১১৪। ১১৪ ধারা অনুসারে, যদি কেউ অপরাধ সংগঠনের সময় উপস্থিত থেকে উৎসাহ দেয় তাহলে তাকে মূল অপরাধীর মতো শাস্তি দেওয়া যায়। ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৭৬ এর সাথে সম্পর্কিত।

দলবদ্ধ হামলার বিচারের বিধান

যখন একাধিক ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে অথবা তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আক্রমণ করে এবং এই আক্রমণের ফলে যদি প্রাণহানি ঘটে তাহলে আইন অনুযায়ী সমবেত উদ্দেশ্য এর অধীন বিচার করা হয়। আর পাথর দিয়ে আঘাত করার মাধ্যমে দলবদ্ধভাবে হত্যা করা হলে সেটি এককভাবে নয় বরং প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী একই শাস্তির অধীনে হবে। প্রত্যক্ষ হামলাকারী ছাড়াও পাশে যারা উৎসাহ প্রদান করেছে অথবা সাহায্য করেছে অথবা পলায়নে সাহায্য করেছে সকলে আইনের দৃষ্টিতে একই অপরাধের অপরাধী।
বাংলাদেশের দন্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি তে দলবদ্ধ অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৩৪ ও ১৪৯ এ সম্পর্কিত বিধান ধারন করে। ধারা ১৪৯ অনুসারে যদি পাঁচ বা ততোধিক ব্যাক্তি এমন উদ্দেশ্য নিয়ে একত্রিত হয় যেটি অবৈধ এবং সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করে এবং সেটি করতে গিয়ে কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ সংঘটিত করে তাহলে বাকি সদস্য ও একই অপরাধে অপরাধী হবে যদিও তারা সেই অপরাধ না করে। আর তাদের এই একত্রিত হওয়ার কার্যক্রমটি অবৈধ সমাবেশ হিসেবে গন্য হবে।

হত্যা কাণ্ডে প্রমাণ ও সাক্ষ্য

হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ ও সাক্ষী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটির উপর নির্ভর করে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রায় প্রদান করে থাকেন। প্রমাণের প্রতিশব্দ হলো এভিডেন্স এবং সাক্ষীর প্রতিশব্দ হলো টেস্টিমনি। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ সহ Evidence Act, 1872 এবং ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ সবগুলোতেই খুনের ক্ষেত্রে প্রমাণ ও সাক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রমাণ দুই ধরনের হতে পারে, একটি হলো প্রত্যক্ষ প্রমাণ অপরটি হল পরোক্ষ প্রমাণ। যদি কোন ব্যক্তি সরাসরি খুন হতে দেখে তাহলে তার সাক্ষটি হবে প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

এবং পরোক্ষ প্রমাণ বলতে বোঝায় খুনের ঘটনার আশেপাশের প্রমাণাদিকে যেটির ওপর নির্ভর করে এবং অনুমান করে অপরাধী নির্ধারণ করা হয়। আরেকটি প্রমাণ হল ডিজিটাল প্রমাণ অর্থাৎ সিসিটিভির ফুটেজ ভিডিও অডিও ইত্যাদির মাধ্যমে যে প্রমাণটি দেওয়া হয় সেটি ডিজিটাল প্রমাণ। Evidence Act, 1872 এর ধারা ৫৯ ও ৬০, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৬১ ও ১৬৪ এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২০১ এ সাক্ষ্য ও প্রমাণ এর বিষয় গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। Evidence Act, 1872 এর ধারা ৫৯ ও ৬০ অনুসারে,

সাক্ষ্য হতে হবে প্রত্যক্ষ এবং বিশ্বস্ত। সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আনুমানিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৬১ ও ১৬৪ অনুসারে পুলিশ তদন্তের সময় সাক্ষীদের কথা রেকর্ড করে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করা হয় এই দুই ধারা অনুসারে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ২০১ অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করে অথবা মুছে ফেলে তাহলে তার উপরেও অপরাধের দায় পড়বে। পাথর দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে। কাজেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব এটিই।

হত্যা কাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক প্রতিক্রিয়া

যখন সমাজে হত্যাকাণ্ডের মতো বিশেষ করে চলমান পাথর দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুধুমাত্র বিবেক কে জাগ্রত করে না বরং এটি সামাজিক প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ড টি ঘটার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের যে ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়া সেটিতে প্রতীয়মান হয় যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর মানুষ আইনের ওপর আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং এটি অবক্ষয় ঘটিয়েছে তারই একটি খন্ড চিত্র। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে এমন ঘটনা ছড়িয়ে যাওয়াতে সাধারণ মানুষসহ ছাত্ররা রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
অনেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এই ধারণায় যে তাদের সাথেও এটি হতে পারে। কিন্তু সঠিক বিচার করার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রকে জবাবদিহির মুখে পতিত করে। এর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আনে। এছাড়াও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টি করে। তবে যদি আদালতের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় তবে জনমতের ভিত্তিতে বিচারের রায় না দিয়ে প্রমাণের ভিত্তিতে দিতে হবে। এতে রাষ্ট্রের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

রাষ্ট্র বনাম আসামী প্রসঙ্গ

খুনের মতো গুরুতর অপরাধে ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে রাষ্ট্র বনাম আসামি হিসেবে। কেননা যে ব্যক্তি খুন হয়েছে তার পরিবার শুধু ভিকটিম নয় বরং এর প্রভাব রাষ্ট্রের উপরেও পড়ছে তাই রাষ্ট্র নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। প্রথম তথ্য প্রতিবেদন পুলিশ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়ে থাকে। প্রথম তথ্য প্রতিবেদনকে আমরা FIR নামে চিনি। মামলা চালানোর দায় গ্রহণ করে পাবলিক প্রসিকিউটর। এবং আদালতে বিচারটি হয় প্রমাণ ও সাক্ষের ভিত্তিতে। পাথর নিক্ষেপ করে হত্যার বিষয়টিতে আদালতে মামলাটি হবে, রাষ্ট্র বনাম মোঃ রাশেদ ও অন্যান্য এই নামে।
নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব
রাষ্ট্র নিজেই বাদী হয়ে মামলা করার কারণটি হলো সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার দায়টি রাষ্ট্র নিজের কাঁধে তুলে নেয়। ভিকটিম পক্ষকে সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এই মামলার ক্ষেত্রে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হয় এবং মামলা তে তার প্রভাব বিস্তার এর চেষ্টা করে থাকে বা সত্যি সত্যি যদি করে তাহলে সামাজিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘটনাটি ত্বরান্বিত হয়। ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে রাষ্ট্র বাদী হয়ে মামলা করে থাকে। এই ক্ষেত্রে সুবিধা হল ভিকটিম পরিবারকে কোন ধরনের ঝামেলায় জড়াতে হয় না।

মন্তব্যঃ নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব

নৃশংস হত্যার আইনসম্মত জবাব সম্পর্কিত আজকের কনটেন্টে গুরুতর অপরাধ সম্পর্কে বাংলাদেশের আইনের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ভাইরাল একটি বিষয় হচ্ছে পাথর মেরে হত্যা করার বিষয়টি। এটি এমন একটি বিষয় যেটি প্রাচীন যুগের বর্বরতার মতো প্রতীয়মান হয়েছে। আধুনিক সভ্য যুগে এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। অনেকের মনে প্রশ্ন ওঠে এই ধরনের ঘটনায় আইনি প্রতিকার রয়েছে কি না। সে সমস্ত পাঠকের মনের সংশয় দূর করার জন্যই আজকের এই আয়োজন।

আজকের আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু আইনের ধারা সম্পর্কে। আইনের ছাত্র ও শিক্ষকগণের জন্য যেমন জরুরী তেমনি একজন নাগরিক হিসেবে আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। এবং এই ধারাগুলো জানার মাধ্যমে পরবর্তীতে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে তার প্রতিকার আপনি নিজেই খুজে পাবেন। আইন সম্পর্কিত কনটেন্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url