বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম সম্পর্কে জানাতে আজকের আর্টিকেলটি লিখা শুরু করলাম। বাংলাদেশে প্রতিদিনই ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত মামলার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। আর এমন ধরণের মামলাই হলো দেওয়ানি মামলা। অনেকেই দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম জানেনা।
বাংলাদেশে-দেওয়ানি-মামলা-করার-নিয়ম
আবার অনেকে না জানার কারণে এই মামলা গুলো করার নিয়ম জানতে চেয়েছেন বা চেয়ে থাকেন। তাই আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে কিভাবে আপনি দেওয়ানি মামলা গুলো করবেন। এবং সাধারনত দেওয়ানি মামলা গুলোর খরচই বা কত।

পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম জানার আগে আমরা আগে জেনে নেই যে কোন মামলা গুলোকে দেওয়ানি মামলা বলে। বাংলাদেশের আইনে সাধারণত দুই ধরনের মামলা করা যায় একটা হল দেওয়ানী মামলা আরেকটা হল ফৌজদারী মামলা। আমি যদি সহজে ভাষায় আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই তাহলে দেওয়ানি মামলা বলতে সেই মামলাগুলোকে বোঝায় যেগুলোতে সাধারণত ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে। জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা, চুক্তি ভাঙার মামলা,

কোন জমি পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত মামলা, বিবাহ বিচ্ছেদ মামলাসহ ইত্যাদি ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সব মামলা দেওয়ানী মামলার অন্তর্ভুক্ত। দেওয়ানী প্রায় সব মামলাতে হয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, নয়তো কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশের সময় দেওয়ানী মামলাতে ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়ে থাকে। ক্ষতিপূরণ অনাদায় মাঝে মাঝে কারাদন্ড দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা গুলো সাধারণত দেওয়ানী আদালতে করা হয়ে থাকে। এবার এই মামলা করার নিয়ম পরবর্তী ধাপে জেনে নিন।

দেওয়ানী মামলা করার প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে দেওয়ানী মামলা করার নিয়ম মূলত সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮ অনুযায়ী নির্ধারিত। যে কেউ তার অধিকার, সম্পত্তি, চুক্তি, লেনদেন বা পারিবারিক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি দেওয়ানি মামলা করতে পারেন। মামলা করার জন্য প্রথমে একজনকে সঠিক আদালত নির্ধারণ করতে হয়, কারণ প্রতিটি মামলার জন্য আদালতের এখতিয়ার (Jurisdiction) ভিন্ন হতে পারে। দেওয়ানী মামলা করার প্রাথমিক ধাপ হলো মামলার plaint বা আরজি তৈরি করা।
এতে বাদীর নাম, বিবাদীর নাম, ঠিকানা, দাবি বা অভিযোগের সুনির্দিষ্ট বিবরণ এবং মামলা করার কারণ উল্লেখ থাকে। এরপর এই plaint সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে হয়। আদালত plaint গ্রহণ করলে মামলাটি রেজিস্ট্রেশন হয় এবং পরবর্তী ধাপে সমন জারি করা হয়, যাতে বিবাদী আদালতে হাজির হতে বাধ্য থাকেন। মামলা করার আগে বাদীকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যেঃ 

  • মামলাটি দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
  • মামলার জন্য প্রয়োজনীয় আদালত ফি যথাযথভাবে জমা দেওয়া হয়েছে।
  • সব প্রমাণ ও নথিপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দেওয়ানী মামলা করার নিয়ম অনুসরণ করলে মামলার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয়। তবে এখানে একজন দক্ষ আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ মামলার প্রতিটি ধাপে আইনগত ব্যাখ্যা ও কৌশল প্রয়োজন হয়। তাই আইনজীবীর সহায়তা নেওয়ার মাধ্যমে দেওয়ানী মামলা করা উচিত। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আইন সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে আইনজীবী সহায়তা নিতে হবে।

আদালতে মামলা দায়ের ধাপ

বাংলাদেশে আদালতে মামলা দায়েরের ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেওয়ানি বিচারব্যবস্থার প্রথমিক পর্যায়। যেকোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন তার অধিকার, সম্পত্তি, চুক্তি বা পারিবারিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তিনি দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন। মামলা দায়েরের প্রধান ধাপগুলো হলোঃ 

  • সঠিক আদালত নির্ধারণঃ প্রথমে দেখতে হবে কোন আদালতের এখতিয়ারে মামলাটি পড়ে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সাধারণত জজ কোর্ট বা সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট জজ কোর্ট নির্ধারিত হয়।
  • প্লেইন্ট (Plaint) প্রস্তুতঃ বাদী বা তার আইনজীবী একটি লিখিত আরজি তৈরি করেন, যাকে প্লেইন্ট বলা হয়। এতে থাকে- বাদীর নাম, ঠিকানা ও বিবাদীর তথ্য মামলার প্রকৃতি ও দাবি ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা চাওয়া প্রতিকার বা রিলিফ।
  • আদালত ফি প্রদানঃ প্রতিটি মামলার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। এটি কোর্ট ফি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত এবং ফি জমা না দিলে plaint গ্রহণ করা হয় না।
  • প্লেইন্ট আদালতে জমাঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কোর্ট ফি সহ plaint আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর আদালত এটি রেজিস্ট্রার খাতায় নথিভুক্ত করে।
  • প্রাথমিক শুনানি ও যাচাইঃ আদালত plaint যাচাই করে দেখে মামলাটি গ্রহণযোগ্য কি না। যদি plaint আইনসম্মত হয়, তবে তা রেজিস্ট্রেশন হয়।
  • সমন জারিঃ মামলার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে আদালত বিবাদীকে উপস্থিতির জন্য সমন জারি করে।
আদালতে মামলা দায়েরের ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে মামলা খারিজ বা প্রত্যাখ্যান হতে পারে। তাই এ পর্যায়ে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহযোগিতা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

দেওয়ানি মামলার সমন জারি

দেওয়ানি মামলার সমন জারি দেওয়ানি বিচার প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আদালত plaint গ্রহণ ও মামলা রেজিস্ট্রেশন করার পর প্রথম কাজ হলো বিবাদীকে সমন পাঠানো। সমনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিবাদীকে জানানো যে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির হতে হবে। সমন জারি প্রক্রিয়া ধাপে ধাপেঃ

  • সমন প্রস্তুতকরণঃ আদালত একটি লিখিত সমন প্রস্তুত করে, যেখানে উল্লেখ থাকে মামলার নম্বর ও নাম, বাদী ও বিবাদীর নাম ও ঠিকানা, হাজিরার নির্দিষ্ট তারিখ, হাজিরা না দিলে আইনগত পরিণতির সতর্কবার্তা।
  • সমন পাঠানোঃ সমন সাধারণত কোর্ট পিয়ন বা প্রসেস সার্ভার মারফত পাঠানো হয়। প্রয়োজনে ডাকযোগে (Registered Post) বা প্রকাশনার মাধ্যমেও পাঠানো যেতে পারে।
  • গ্রহণ ও স্বাক্ষরঃ বিবাদী সমন গ্রহণ করলে সেটিতে স্বাক্ষর দেন, যা আদালতে ফেরত আসে প্রমাণ হিসেবে। যদি বিবাদী সমন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, তবে প্রসেস সার্ভার তা উল্লেখ করে এবং সেটিই আদালতের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়।
  • অপ্রাপ্য ক্ষেত্রে ব্যবস্থাঃ যদি বিবাদীকে সমন দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে আদালত নোটিশ বোর্ডে টানানো বা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সমন কার্যকর করতে পারে। একে বলা হয় substituted service।
  • সমন ফেরতঃ সমন পৌঁছে দেওয়ার পর তা আদালতে ফেরত আসে এবং আদালত নিশ্চিত হয় যে বিবাদী মামলার ব্যাপারে অবগত।
দেওয়ানি মামলার সমন জারি একটি বাধ্যতামূলক ধাপ। বিবাদীকে যথাযথভাবে অবগত না করলে মামলার কার্যক্রম এগোতে পারে না। এ জন্য আদালত সবসময় নিশ্চিত করে যে সমন সঠিকভাবে জারি ও কার্যকর হয়েছে।

প্রথম শুনানির প্রয়োজনীয় নিয়ম

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম এ মামলার প্রক্রিয়ায় প্রথম শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। plaint গ্রহণ ও সমন জারি হওয়ার পর নির্ধারিত তারিখে বাদী ও বিবাদী উভয়কেই আদালতে উপস্থিত হতে হয়। এই দিনে আদালত মূলত পক্ষগণের অবস্থান শুনে মামলার প্রকৃতি ও বিরোধের বিষয় নির্ধারণ করে। বিবাদী উপস্থিত হলে তিনি সাধারণত লিখিত জবাব বা Written Statement জমা দেন, যেখানে বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করা হয় বা নিজের দিক থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিবাদী উপস্থিত না হলে আদালত একতরফাভাবে (ex-parte) শুনানি চালাতে পারে।
প্রথম শুনানিতে আদালত প্রমাণপত্র ও নথিপত্র প্রাথমিকভাবে যাচাই করে দেখে সেগুলো আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য কি না। একই সঙ্গে আদালত এ সময় পক্ষগণকে বিকল্প বিরোধ সমাধান বা Alternative Dispute Resolution (ADR)-এর দিকেও উৎসাহিত করতে পারে, যাতে অযথা সময়ক্ষেপণ না হয়। মূলত প্রথম শুনানি থেকেই মামলার কার্যক্রমের রূপরেখা তৈরি হয় এবং এখান থেকেই আদালত মামলার ভবিষ্যৎ ধাপগুলো দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করে।

ইস্যু ফ্রেমিং আদালতের কার্যক্রম

দেওয়ানি মামলার কার্যক্রমে ইস্যু ফ্রেমিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ এখান থেকেই মামলার মূল প্রশ্নগুলো নির্ধারিত হয়। প্রথম শুনানির পর আদালত বাদী ও বিবাদীর দাবি ও জবাব বিশ্লেষণ করে কোন কোন বিষয়ে আসল বিরোধ রয়েছে, তা চিহ্নিত করে। এই বিরোধপূর্ণ প্রশ্নগুলোকে আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করে, যাকে বলা হয় ইস্যু। সহজভাবে বলতে গেলে, ইস্যু হলো সেই মূল প্রশ্ন বা বিতর্ক যেগুলোর উত্তর প্রমাণ, সাক্ষ্য এবং শুনানির মাধ্যমে আদালত বের করবে। ইস্যু ফ্রেমিং এর সময় আদালত পক্ষগণের উত্থাপিত দাবি, অস্বীকার, নথিপত্র এবং আইনগত যুক্তি সবকিছু বিবেচনা করে। যেমন,
বাংলাদেশে-দেওয়ানি-মামলা-করার-নিয়ম
কোনো সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে মামলা হলে ইস্যু হতে পারে, বাদী কি সত্যিই উক্ত সম্পত্তির মালিক অথবা বিবাদীর দখল বৈধ কি না। এভাবে প্রতিটি ইস্যু মামলার প্রকৃতি অনুযায়ী স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়। ইস্যু ফ্রেমিং এর পর মামলার কার্যক্রম আরও সংগঠিত ও লক্ষ্যভিত্তিক হয়। আদালত আর অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট না করে কেবল ইস্যু সম্পর্কিত প্রমাণ ও সাক্ষ্য শুনে রায় প্রদান করে। এজন্য ইস্যু ফ্রেমিংকে বলা হয় মামলার হৃদয়, কারণ সঠিক ইস্যু নির্ধারণ ছাড়া মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। এ ধাপেই মূলত বোঝা যায় কোন কোন প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ, কোন কোন সাক্ষীকে হাজির করতে হবে এবং মামলার রায় কোন প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে।

বিকল্প বিরোধ সমাধান প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলার কার্যক্রমে বিকল্প বিরোধ সমাধান প্রক্রিয়া (Alternative Dispute Resolution - ADR) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আদালতে দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালত অনেক সময় পক্ষগণকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার সুযোগ দেয়। ADR প্রক্রিয়ায় মূলত পক্ষগণ নিজেরাই সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেন এবং আদালত কেবল সেই সমঝোতাকে আইনগত স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে সময়, খরচ এবং অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ADR-এর মাধ্যমে সমাধান করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো উভয় পক্ষের স্বেচ্ছাসম্মত অংশগ্রহণ। এতে সম্পর্ক নষ্ট না করে বরং নতুন করে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হয়। বিশেষ করে পারিবারিক বিরোধ, ব্যবসায়িক চুক্তি বা সম্পত্তি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে ADR খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। আদালত প্রয়োজনে একজন মধ্যস্থতাকারী বা Mediator নিয়োগ করতে পারে, যিনি উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে সাহায্য করেন।

বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় ADR এখন একটি স্বীকৃত পদ্ধতি এবং আইন অনুযায়ী আদালত মামলার যেকোনো পর্যায়ে পক্ষগণকে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পরামর্শ দিতে পারে। সফলভাবে ADR সম্পন্ন হলে আদালত সেই সমঝোতাকে ডিক্রি আকারে রূপ দেয়, যা ভবিষ্যতে কার্যকর রায় হিসেবে গণ্য হয়। ফলে মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পরিবর্তে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় এবং উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট থাকে।

৩০ ধারা পদক্ষেপ ব্যাখা

বাংলাদেশের দেওয়ানি কার্যবিধি অনুযায়ী সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮-এর ৩০ ধারা একটি বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে। এই ধারার মাধ্যমে আদালত মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তির স্বার্থে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। মূলত এই ধারা আদালতকে ক্ষমতা দেয় যে, কোনো মামলা কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কিংবা পক্ষগণের আবেদনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট নির্দেশ জারি করতে পারে। ৩০ ধারার অধীনে আদালত যেমন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রমাণ হাজিরের নির্দেশ দিতে পারে, পক্ষগণকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেওয়ার আদেশ দিতে পারে, এমনকি সাক্ষীদের হাজির করার ব্যবস্থা করতেও আদালত বাধ্য করতে পারে।

এ ধারার মাধ্যমে আদালত চায় মামলাটি যেন বিলম্বিত না হয় এবং ন্যায়বিচার দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া, আদালত এই ধারার ক্ষমতা ব্যবহার করে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব বা অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে পারে। যেমন, যদি দেখা যায় কোনো পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রমাণ গোপন করছে বা মামলাকে দীর্ঘসূত্রিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাহলে আদালত প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। ৩০ ধারা পদক্ষেপ দেওয়ানি বিচার প্রক্রিয়ার একটি কার্যকর হাতিয়ার, যা আদালতকে মামলার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এর ফলে মামলার কার্যক্রম স্বচ্ছ হয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সহজ হয়।

দেওয়ানি মামলার রায় কার্যকর

দেওয়ানি মামলার রায় ঘোষণার পরেই প্রকৃত অর্থে মামলার সমাপ্তি ঘটে না। রায় বা ডিক্রির মাধ্যমে আদালত পক্ষগণের অধিকার ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করে দিলেও, সেটি বাস্তবে কার্যকর না হলে মামলাকারী পক্ষ তার ন্যায্য প্রাপ্য ভোগ করতে পারে না। এজন্য দেওয়ানি কার্যবিধি (Code of Civil Procedure, 1908) অনুযায়ী রায় কার্যকর করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে,
বাংলাদেশে-দেওয়ানি-মামলা-করার-নিয়ম
যা ডিক্রি এক্সিকিউশন নামে পরিচিত। রায় কার্যকরের প্রথম ধাপ হলো মামলার বিজয়ী পক্ষ আদালতে একটি Execution Petition দাখিল করা। এই আবেদনের মাধ্যমে আদালতকে জানানো হয় যে, ঘোষিত ডিক্রি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপর আদালত যাচাই করে দেখে যে রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না। যদি না থাকে, তবে আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষকে নোটিশ জারি করে এবং কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু করে। রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমনঃ

  • যদি রায়ে অর্থ প্রদানের নির্দেশ থাকে, তবে আদালত দেনাদারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, নিলাম বা বেতন কর্তন করার মাধ্যমে অর্থ আদায় করতে পারে।
  • যদি রায়ে স্থাবর সম্পত্তির দখল প্রদানের নির্দেশ থাকে, তবে আদালত আদালতের কর্মচারী বা পুলিশ প্রেরণ করে মামলাকারীকে সম্পত্তির প্রকৃত দখল বুঝিয়ে দেয়।
  • যদি কোনো কাজ করা বা না করার নির্দেশ থাকে (injunction), তবে আদালত প্রতিপক্ষকে বাধ্য করে নির্দেশ বাস্তবায়ন করায়।
ডিক্রি কার্যকর করতে গিয়ে প্রায়শই বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়, যেমন, প্রতিপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করা, সম্পত্তি গোপন রাখা বা ভুয়া দাবি উত্থাপন করা। এসব ক্ষেত্রে আদালত তার নিজস্ব ক্ষমতায় প্রতিকার প্রদান করে এবং প্রয়োজনে পুলিশ সহায়তা নিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করে। বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় রায় কার্যকরের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, রায় কার্যকর না হলে মামলাকারীর ন্যায়বিচার অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই রায় প্রদানের পর সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদালত নিশ্চিত করে যে, মামলাকারী তার বৈধ অধিকার ও প্রাপ্য ফল ভোগ করতে সক্ষম হচ্ছে।

মন্তব্যঃ বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম

বাংলাদেশে দেওয়ানি মামলা করার নিয়ম সম্পর্কে আজকে লেখা হলো। দেওয়ানি মামলার ধাপগুলো বিচার প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় কার্যকর পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের মাধ্যমে আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষত সমন জারি, প্রথম শুনানি এবং ইস্যু ফ্রেমিং ধাপগুলো মামলার গতিপথ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আবার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (ADR) ব্যবস্থার মাধ্যমে পক্ষগণকে আপসে যেতে উৎসাহিত করা হয়, যা সময় ও খরচ বাঁচায়। সবশেষে রায় কার্যকর হওয়াই দেওয়ানি মামলার মূল লক্ষ্য, কারণ রায় কার্যকর না হলে মামলাকারী তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারে না। তাই দেওয়ানি বিচার প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে প্রতিটি ধাপের সঠিক অনুসরণ অপরিহার্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url