জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া
জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া বিষয়টি নতুন এক বিষয় নয়। যুগের পর যুগ মানুষের মাঝে
জমি নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকে। এই বিরোধ মাঝে মাঝে প্রাণনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই
এই বিরোধের মামলা হয়।
আর যখন মামলা হয় তখন মামলা প্রক্রিয়ার প্রশ্ন তখনই উঠে আসে। আর একজন সচেতন নাগরিক
হিসেবে আমাদের বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে থাকা আর এই ব্যাপারে সজাগ
থাকা জরুরি।
পেজ সূচিপত্রঃ জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া
জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া
জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব রাখে।
জমি মালিকানা, দখল বা সীমানা বিরোধের কারণে পরিবারে, প্রতিবেশী বা ব্যবসায়ী
অংশীদারের সাথে মামলা দেখা দেয়। এই মামলা প্রক্রিয়া বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
কারণ আপনাকে আইনি জটিলতা থেকে এই বিষয়টি রক্ষা করবে এবং ভূমি সম্পর্কিত সঠিক
অধিকার লাভ করাতে আপনাকে সাহায্য করবে। আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে
জানিয়ে দেবো জমি বিরোধ মামলার কিভাবে শুরু হয়,
এবং মালিকানা প্রমাণের ধাপ আর সমনজারী ও ফেরত প্রক্রিয়া এবং বিকল্প বিরোধ সমাধান
ব্যবহার করে কিভাবে মামলা দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সমাধান করবেন। এর পাশাপাশি তুলে ধরা
হবে ভূমি দখল রক্ষার আইনি পরামর্শ, আদালতের নির্দেশনা এবং ভূমি সংক্রান্ত ধারা ও
আইন সমূহ। আমাদের আজকের আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে জমি বিরোধ সম্পর্কে যত ভুল ধারণা
রয়েছে সব কেটে যাবে এবং সঠিক তথ্য পাওয়ার মাধ্যমে ভূমি আইন সম্পর্কে আপনার নতুন
ধারণা সৃষ্টি হবে।
জমি মালিকানা প্রমাণ সংগ্রহ
জমি বিরোধীদের মামলা শুরু করার আগেই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হল জমির মালিকানা
প্রমাণ সংগ্রহ করা। আপনি যদি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন তাহলে এটি আইনি দৃষ্টিকোণ
থেকে অপরিহার্য পদক্ষেপ। জমির খতিয়ান, দলিলপত্র, রেকর্ড নোটিশ, দখলপত্র, কর
চক্রপত্র এবং পূর্বের আদালতের আদেশ এই প্রমাণের ভেতর থাকতে পারে। মামলার সময়
আপনার পক্ষকে শক্তিশালী করে তখনই যখন আপনি জমি সম্পর্কিত সমস্ত দলিল সঠিকভাবে
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন।
আবার ভূমি মালিকানা যাচাই, দলিলের সত্যতা পরীক্ষা এবং পরিচয়পত্র সংযুক্তি এ
প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি মামলার জটিলতা এড়াতে চান তাহলে
জমি মালিকানা সম্পর্কিত সমস্ত দলিলের কপি প্রস্তুত রাখুন। কারণ আগে থেকেই যখন
আপনি এসব প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন তখন মামলার জটিলতা আপনার জন্য কমে যাবে এবং
আপনার পক্ষে রায় আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এছাড়াও আপনার মামলাকে প্রভাবিত করবে
এই ছোট বিষয়টি।
সমন জারি ও গ্রহন
জমি বিরোধ সম্পর্কিত যত মামলা রয়েছে সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সমনজারি ও
গ্রহণ। যখন কোন মামলা আদালত গ্রহণ করে থাকেন তখন সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আদালতে হাজির
হওয়ার জন্য আদালত সমান জারি করেন। সমান এক ধরনের বৈধ নোটিশ যেটার মাধ্যমে বিবাদী
বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে মামলা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
দেওয়ানি মামলার মামলাপর্বতে
সমান জারির বিষয় আছে। সমন জারির সময় আদালত নিশ্চিত করেন যে,
এটি সঠিকভাবে ডাকযোগে বা কোর্ট পিয়নের মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের
দ্বারা বিবাদীর কাছে পৌঁছেছে। যদি বিবাদী ইচ্ছাকৃতভাবে সমন গ্রহণ থেকে এড়িয়ে
যান আবার যদি ঠিকানা অস্পষ্ট থাকায় সমান ফেরত আসে তাহলে আদালত বিকল্প ব্যবস্থা
হিসেবে পাবলিক নোটিশ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের
মাধ্যমে প্রেরণ করেন। আর সমন গ্রহণ করা একটি বাধ্যতামূলক আইনি দায়িত্ব। যদি কোন
পক্ষ সমনজারীর পর তা উপেক্ষা করে তাহলে আদালত একতরফার রায় দিয়ে দেয়।
বিকল্প বিরোধ সমাধান পদ্ধতি
বাংলাদেশের দেওয়ানী মামলা গুলো বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত মামলাগুলো বছরের পর বছর
চলতে থাকে। এতে করে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষকে হয়রানির শিকার হতে হয় এর
পাশাপাশি অর্থ খরচ হয় এবং মানসিকভাবে চাপের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। আদালত
বিকল্প বিরোধ সমাধান নিষ্পত্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে এমন
পরিস্থিতিতে। আদালতের প্রচিলত বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আলোচনার মাধ্যমে
মধ্যস্থতা, সালিশি বা সমঝোতার দ্বারা খুব তাড়াতাড়ি, সাশ্রয়ী এবং
শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ মীমাংসার পদ্ধতিকে বিকল্পবিরোধ নিষ্পত্তি বলে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উল্লেখযোগ্য ধাপসমূহ হল মধ্যস্থতা, সালিশি ও
সমঝোতা। এই তিন পদ্ধতি অনুসরণ করে আদালতের বাইরে বিরোধ-পক্ষ একে অপরের সাথে
মীমাংসা করে নিতে পারেন। জমি সংক্রান্ত মামলাগুলো বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির
মাধ্যমে সমাধান করা বিশেষ জরুরি কারণ যদি আপনি আদালতের বাইরে এটি মীমাংসা না করেন
তাহলে আপনাকে বড় অংকের টাকা গুনতে হবে মামলার পরিচালনার জন্য এবং অন্যান্য খরচের
জন্য। এর সাথে উপহার স্বরূপ আপনি পাচ্ছেন হয়রানি এবং বছরের পর বছর মানসিক
চাপ।
প্রথম শুনানি প্রস্তুতি নির্দেশনা
জমি বিরোধী মামলা প্রক্রিয়াতে অথবা দেওয়ানী মামলা সমূহতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ
হিসেবে বিবেচিত হয় প্রথম শুনানি। কারণ এই ধাপেই বিচারক মামলার কাঠামো নির্ধারণ
করে থাকেন এবং বিরোধীপক্ষকে তাদের দাবি ও জবাব উপস্থাপনের সুযোগ করে দেন। কাজেই
প্রথম শুনানির আগে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া আপনার জন্য খুবই জরুরী। এই
প্রস্তুতির জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করে সঠিকভাবে
সাজাতে হবে।
এবং এর মধ্যে থাকতে হবে আপনার জমির খতিয়ান, দলিল, রেকর্ড অফ রাইটস, দখলের
প্রমাণ, কর পরিশোধের রশিদ এবং আগের জমি সংক্রান্ত যেকোনো নথি। প্রথম শুনানিতে
আপনার আইনজীবির মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য এবং মামলার আসল পয়েন্টগুলো স্পষ্টভাবে
আদালতের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন এজন্য আপনার আইনজীবী যেন আদালতে সঠিক ভাষায় এবং
প্রাসঙ্গিক আইনি ধারা উল্লেখ করে তার বক্তব্য দেন সেজন্য পূর্ব প্রস্তুতি
জরুরী।
ইস্যুফ্রেমং ধাপ সমূহ সম্পর্কে
জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়াতে এটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ হিসেবে বিবেচিত হয় ইস্যু
ফ্রেমিং। আদালতের মূল বিষয়গুলো স্পষ্ট ভাবে নির্ধারণ করাকে ইস্যু ফ্রিমিং বলে।
কিইস্যু ফ্রেমিং এর মাধ্যমে কোন দ্বন্দ্ব বা দাবী অথবা অভিযোগের পরিধি পরিষ্কার
থাকে। ইস্যু ফ্রেমিং হলো মামলার মৌলিক কাঠামো নির্ধারণের ধাপ। নিচে ইস্যু
ফ্লেমিং এর প্রক্রিয়া গুলো উল্লেখ করা হলোঃ
- দাবি ও জবাব যাচাই করা।
- প্রমাণের প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ।
- সাক্ষী তালিকা নির্ধারণ।
- আইনি ধারা প্রয়োগ।
- শেষ ইস্যু ঘোষণা।
এবং সেই মামলার মূল বিষয়গুলোর প্রমাণের জন্য সাক্ষী নির্বাচন করা হয়।
বাংলাদেশের জমি আইন দখল সংক্রান্ত ধারা এবং আদালতের পূর্বের রায় এর ওপর নির্ভর
করে আদালত নির্ধারণ করেন কোন ধারা গুলো মামলার জন্য প্রয়োগ করা যাবে। সবগুলো
যাচাই ও সিদ্ধান্তের পরে আদালত ফ্রেমড ইস্যু সমূহ ঘোষণা করবেন এবং এই ইস্যুগুলো
মামলার প্রক্রিয়াজাত সিদ্ধান্ত ও রায়ের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
ভূমি দখল রক্ষা আইন
জমি সংক্রান্ত বিরোধ বাংলাদেশের গ্রামে এবং শহরে একটি বহুল আলোচিত সমস্যা। অনেক
সময় আসল মালিককে তার নিজের জমি ভোগ দখল থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমন অনৈতিক
প্রক্রিয়া ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ভূমি দখল ও হস্তান্তর রক্ষা আইন, ২০০১
প্রণয়ন করে। এই আইনটিকে সাধারণত ভূমি দখল রক্ষা আইন বলা হয়। এই আইনের মূল
উদ্দেশ্য হলো অবৈধ দখল প্রতিরোধ, প্রকৃত মালিকের অধিকার সংরক্ষণ, বিচারব্যবস্থায়
সুরক্ষা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
আরও পড়ুনঃ আইনের শাসন বা রুল অফ ল
আইনটির ধারা ৪-এ অবৈধ দখল প্রতিরোধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি বেআইনিভাবে
অন্যের জমি দখল করলে সে দখল বৈধ হবে না এবং আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ
হিসেবে গণ্য হবে।একই আইনের ৫ নং ধারাতে প্রকৃত মালিক কে পুনরায় দখল প্রদান এর
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং ধারা ৬-তে দখল নিয়ে জোরপূর্বক কাজ নিষিদ্ধ করা
হয়েছে। সবশেষে আইনটির ৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অবৈধভাবে জমি দখল
করবে তার জন্য নির্ধারিত শাস্তি হলো দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড অথবা জরিমানা
অথবা উভয় দণ্ড।
আদালতের নির্দেশনা মেনে চলা
সিভিল প্রসিডিউর কোড, ১৯০৮ অনুসারে আদালতের নির্দেশনা মানার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ
করা হয়েছে। আইনটির ৩০ নং ধারাতে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে আদালত
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। ধারা ৩৫-এ বলা হয়েছে অযৌক্তিক বিলম্ব করলে খরচ
ধার্য করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি অর্ডার ১১, ১২ ও ১৬ তে বলা হয়েছে নথি, তথ্য
এবং সাক্ষী হাজির করার বিষয় নির্দেশনা প্রদান করা সম্পর্কে।
আপনি যদি আদালতের এই নির্দেশন না মানেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে শাস্তি দিতে পারবে
আদালত এবং অনেক ক্ষেত্রে মামলা একতরফা শুনানি হতে পারে আদালত জরিমানা অথবা
কারাদণ্ড দিতে পারে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দেশনা অমান্য করেন দেওয়ানী
কার্যবিধির ৩০ ধারা অনুযায়ী আদালত পক্ষ্য গনকে বাধ্য করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ
নিতে পারেন। তাই আদালতে নির্দেশনা মেনে চলা শুধু আইনি বাধ্যবাধকতা নয় বরং
এটি মামলার পক্ষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম।
আদালতের খারিজ বা সঠিক রায়
দেওয়ানী মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে চূড়ান্ত ধাপ হলো আদালতের খারিজ
বা সঠিক রায়। বিচার প্রক্রিয়ার পর আদালত যখন দুই পক্ষের উপস্থাপিত প্রমাণ, দলিল,
সাক্ষ্য ও আইনি যুক্তি পর্যালোচনা শেষ করেন তখন তিনি মামলার উপর রায় দেন। এই
রায়ের উপর ভিত্তি করেই মামলার ভাগ্য নির্ধারণ হয়, খারিজ হবে নাকি সঠিক রায়
ঘোষণা করা হবে। আদালত যদি মনে করেন যে মামলাটি আইনগত ভিত্তিহীন, যথেষ্ট
প্রমাণের অভাব আছে অথবা,
বাদী পক্ষ মামলাটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাহলে আদালত মামলাটি
খারিজ করে দিতে পারেন। অপরদিকে যদি আদালত প্রমাণাদির ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হন
এবং বাদী পক্ষের দাবি আইনসঙ্গত এবং প্রমাণিত হয়েছে তবে বাদীর পক্ষে সঠিক রায়
প্রদান করে থাকেন। যার ফলে বাদী তার দাবি অনুযায়ী প্রতিকার পায় এবং
বিবাদীপক্ষকে নির্দিষ্ট নির্দেশ পালন করতে হয়। আদালতের দেওয়া রায় বাধ্যতামূলক
হয় এবং দুই পক্ষকে সেটি মানতে হয়।
মন্তব্যঃ জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া
জমি বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুঁটিনাটি আজকের আর্টিকেলে বিশ্লেষণ করা
হয়েছে। যদি আপনি আজকের আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়ে
থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন জমি সম্পর্কিত বিরোধ মামলা প্রক্রিয়াগুলোতে আপনাকে কি
করতে হবে। এবং আজকের আর্টিকেল যদি পড়ে থাকেন তাহলে এই বিষয়ের উপর আপনি
প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যাবেন।
আপনার মামলার বিষয়টি কি রকম সেটির উপর নির্ভর করে কিছু পার্থক্য আসতে
পারে। সেজন্য আপনাকে একটি আইনজীবীর সহায়তা নিতে হতে পারে। আমাদের
আজকের লেখনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনাদেরকে এমন বিরোধ মামলা প্রক্রিয়া সম্পর্কে
প্রাথমিক ধারণা দেওয়া। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সেই উদ্দেশ্যে আমরা
সফল। নিয়মিত এমন কন্টেন্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
আমিন একটিভ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url